সৃজন শীল
কোনও জনপ্রতিনিধি নিজের এলাকায় গেলেন। কী হতে পারে? কেউ হয়তো বিক্ষোভ দেখাবেন। কেউ হয়তো বলবেন, এতদিন পরে এলেন! কেউ বলবেন, রাস্তাটা খারাপ, ঠিক করে দিন। কেউ বলবেন, ওই ব্রিজটা এখনও হয়নি কেন? কেউ বলবেন, এই কাজটায় এত টাকা চুরি হয়েছে।
কিন্তু একজন পর্দার নায়ক যদি এলাকায় যান! এসব কোনওটাই ঘটবে না। সবাই ধরেই নেবেন, তাঁদের এলাকায় এত বড় মাপের একজন তারকার পা পড়েছে। তাঁদের জীবন যেন ধন্য হয়ে গেল। কেউ সেলফি তুলতে চাইবেন। কেউ হাত মেলাতে চাইবেন। কেউ কাজের কৈফিয়ত চাইবেন না। কেউ অভিযোগও জানাবেন না।
নেতা গ্রামে গেলে লোক ডেকে আনতে হবে। কিন্তু অভিনেতা গ্রামে গেলে লোক আপনাআপনিই জড়ো হয়ে যাবে। এমনকী বিরোধীরাও উঁকি মেরে দেখতে চাইবেন। ফাঁকতালে একবার ছবি তুলতে চাইবেন। সেই কারণেই তারকাদের এত কদর। তিনি রুপোলি পর্দার নায়ক বা নায়িকা হতে পারেন। খেলার মাঠের তারকাও হতে পারেন। সব দলই বোঝে, তারকা মাঠে নামালে অনেক মুশকিল আসান। তাই প্রার্থী তালিকায় কয়েকজন তারকাকে রাখতে চান। আবার তারকারাও বোঝেন, তাঁদের কদর কতখানি। তাই সুযোগ পেলেই ‘জনসেবা’ করতে তাঁরাও মাঠে নেমে পড়েন।
ভোটের ময়দানে তারকার আনাগোনা মোটেই হাল আমলের ঘটনা নয়। বহুকাল আগে থেকেই হয়ে আসছে। দক্ষিণ ভারতে এই প্রবণতা অনেক বেশি। জাতীয় রাজনীতিতেও প্রচারে তারকাদের ব্যবহার বহুদিন ধরে। এভাবে ভোটের প্রচার করতে করতে তারকারা একসময় ভোটে দাঁড়িয়েই পড়লেন। কিন্তু এই তারকারা কি সত্যিই জনতার সমস্যা বোঝেন? তাঁরা কি সত্যিই সারা বছর তাঁদের পাশে থাকতে পারেন? তাঁরা কি সত্যিই এলাকার ততখানি উন্নয়ন করতে পারেন! কেউ কেউ বিষয়টা আয়ত্ব করে নেন ঠিকই, কিন্তু অধিকাংশক্ষেত্রে ফলাফলটা খুব একটা আশাপ্রদ নয়। তাঁরা মাঝে মাঝে এলাকায় দর্শন দিয়েই ভেবে নেন, তাঁরা অনেককিছু করে ফেলেছেন। তাঁরা দেখা দিয়েই ধন্য করেছেন। একজন সাংসদের কী দায়িত্ব, সেটা অধিকাংশই বুঝে উঠতেই পারেন না।
কিন্তু দলগুলো তারকাদের পেছনে ছোটে কেন? ১) তারকার পেছনে খরচ করতে হয় না। তিনি নিজেই অনেকটা খরচের দায়িত্ব নিয়ে ফেলেন। ২) কর্মীদের আলাদা করে নামাতে হয় না। তারকার পাশে হাঁটছি, এটাই বিরাট মোটিভেশন। ৩) তাঁকে অন্যান্য কেন্দ্রের প্রচারেও কাজে লাগানো যায়। ৪) সারা বছর নানা মিছিলে হাঁটানো যায়। ৫) তিনি দূরে দূরেই থাকেন। ফলে এলাকার ঝুটঝামেলায় ততখানি জড়ান না। ৬) এলাকার আর্থিক ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে ঝামেলার আশঙ্কা কম। ৭) স্থানীয় গোষ্ঠীকোন্দল অনেকটাই চাপা দেওয়া যায়। ৮) বকলমে এলাকার নেতারাই কাজ সামলে দেন। ৯) তারকার সুবাদে দলেরও প্রচার হয়ে যায়। ১০) তারকা ইমেজকে কাজে লাগিয়ে তিনি চাইলে অনেক উন্নয়নের কাজ করতেই পারেন। এমনকী অনেক বিক্ষোভকেও দিব্যি সামাল দিতে পারেন।
এইসব সুবিধেগুলো উড়িয়ে দেওয়ার নয়। তাই ভোটের বাজারে তারকাদের কদর ছিল, আছে, থাকবে।
এইসব সুবিধেগুলো উড়িয়ে দেওয়ার নয়। তাই ভোটের বাজারে তারকাদের কদর ছিল, আছে, থাকবে।