যাঁরা দলে নিচ্ছেন, তাঁদের দায় নেই!‌

সৃজন শীল

কলকাতা ফুটবলে দলবদল মানেই ছিল নতুন নতুন চমক। এবার কে কোন দলে যাচ্ছেন?‌ কারও সঙ্গে মোহনবাগান হয়তো পাকা কথা বলে নিয়েছে। হঠাৎ দেখা গেল, তিনি সই করছেন ইস্টবেঙ্গলে। আবার কেউ হয়তো ইস্টবেঙ্গলের ঘরের ছেলে। কিন্তু দেখা গেল, নানা অভিমানের মেঘ জমা হয়েছে। সেই অভিমানই তাঁকে ঠেলে দিয়েছে মোহনবাগান শিবিরে। সাতের দশক, আটের দশকে দলবদলের এমন কত কাহিনি ছড়িয়ে আছে।


ফুটবল থেকে সেই ‘‌দলবদল’‌ প্রায় হারিয়ে গেছে। সেই দলবদলের হাওয়া কি এবার রাজনীতিতে এসে পড়ল!‌ অবশ্য, রাজনীতিতে দলবদল মোটেই হাল আমলের ঘটনা নয়। এক দল থেকে অন্য দলে যাওয়ার নজির অনেক আগেও ছিল। কিন্তু তার একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া থাকত। দীর্ঘদিন ধরে দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে। অভিমান জমা হচ্ছে। যা হয়তো তাঁকে অন্য শিবিরে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন দলবদলটাও যেন তৎকাল টিকিটের মতো। সকাল পর্যন্ত যিনি এক দলের হয়ে মিছিল করেছেন, হঠাৎ দেখা গেল, বিকেলে তিনি অন্য দলের পতাকা ধরছেন। আগের সন্ধেতেও টিভিতে যিনি শাসকের হয়ে প্রবল চিৎকারে গলা ফাটিয়েছেন, পরের সন্ধ্যায় তিনিই আসছেন অন্য দলের হয়ে সওয়াল করতে।


ভিনরাজ্যে এই প্রবণতাকে বলা হত ‘‌আয়ারাম–‌গয়ারাম’‌ রাজনীতি। যেখানে সকালে–‌বিকেলে আনুগত্য বদল হত। সেই হাওয়া সংক্রমিত হতে হতে দিব্যি এই বাংলাতেও পৌঁছে গেছে। দলবদলের যুক্তিগুলো মোটামুটি চেনা। শাসক থেকে বিরোধী শিবিরে গেলে বলা হয়, ‘‌দম বন্ধ হয়ে আসছিল।’‌ আবার বিরোধী থেকে শাসকদলে এলে বলা হয়, ‘‌উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে সামিল হলাম।’‌ এই ভোটের মরশুমে দলবদলের প্রবণতাটা বহুগুন বেড়ে যায়। আসল কথা হল, টিকিটের তালিকায় নাম আছে কিনা। নাম থাকবে না, বুঝতে পারলেই অন্য শিবিরে আগাম যোগাযোগ শুরু হয়ে যায়। দুটো রাস্তাই খোলা থাকে। টিকি পেলে ভাল, নইলে চললাম। আর বিপক্ষ শিবিরও তেমন। তারাও দরজা যেন হাট করে খুলে রাখে। নিজের দলের কোনও কর্মীর নাম হয়তো তালিকায় ছিল। যেই বিপক্ষ শিবিরের ওজনদার কেউ এলেন, অমনি নিজের দলের সেই কর্মী ব্রাত্য হয়ে গেলেন। ফুল–‌মালা দিয়ে বরণ করে নেওয়া হল ‘‌দলবদলু’‌কে।


যিনি দলবদল করেন, আমরা অনেক সময় তাঁকে দোষারোপ করি। একা তাঁকে দায়ী করে কী হবে?‌ যাঁরা দলে নিচ্ছেন, তাঁদেরও কোথাও একটা থামা দরকার। নৈতিক কারণে বা প্রতিবাদ জানিয়ে কেউ দলবদল করলে তাঁকে তবু নেওয়া যায়। কিন্তু যিনি স্রেফ টিকিট না পেয়ে দলবদল করছেন, বা যাঁর নামে কদিন আগেও দুর্নীতির ভুরি ভুরি অভিযোগ তোলা হয়েছে, তিনি যখন দলবদল করছেন, তখন কোথাও একটা ছাঁকনি থাকা দরকার। সব দলকেই নতুন করে এই নিয়ে ভাবতে হবে। আবার যিনি দলবদল করছেন, অনেকসময় তিনি দিব্যি জিতেও যান। তার মানে, আমরাও কোথাও একটা মান্যতা দিয়ে ফেলছি সেই দলবদলকে। তাই আয়নার সামনে বোধ হয় আমাদেরও দাঁড়ানোর সময় এসেছে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.