রচনা শত্রু নন, তবু চাই তিনি হারুন

উইশফুল থিঙ্কিং। অর্থাৎ, আমি কী চাই। ভোটে কে জিতবেন, কে হারবেন, তা ঠিক করবেন জনতা। কিন্তু কার জয় চাই, কার পরাজয় চাই। কেন?‌ এই নিয়েই বিশেষ বিভাগ। এবার রচনা ব্যানার্জি। তাঁকে নিয়ে লিখলেন বিপ্লব মিশ্র।।

আমি খুব বড় সিনেমার বোদ্ধা নই। প্রচুর সিনেমা দেখি, এমন দাবিও না করাই ভাল। তাই রচনা ব্যানার্জি কেমন অভিনেত্রী, বলার মতো জায়গায় নেই। তবে তাঁর কয়েকটি ছবি দেখার সুযোগ হয়েছে। যার বেশিরভাগই টিভিতে। একটি ছবি বেশ ভাল লেগেছিল, তা হল রামধনু।

বাংলার মানুষের কাছে রচনা অনেক বেশি জনপ্রিয় ‘‌দিদি নম্বর ওয়ান’‌ এর জন্য। এই ভূমিকায় রচনাকে মন্দ লাগেনি। মার্জিত, রুচিশীল বলেই মনে হয়েছে। তিনি তৃণমূলের হয়ে দাঁড়ালেন বলে রাতারাতি খারাপ মানুষ হয়ে গেলেন, এমনটাও মনে করি না। তাঁর প্রতি কোনও ব্যক্তিগত রাগও নেই। কিন্তু তাঁকে এমপি হিসেবে মানতে পারি না। তিনি বাংলার হয়ে সংসদে যাবেন, এতে বাংলার গৌরব এতটুকুও বাড়বে বলে মনে হয় না। বরং বাংলাকে নিয়ে যে হাসাহাসি হয়, উনি তাতে কিছুটা বাড়তি মাত্রা যোগ করতে পারেন।

আচ্ছা, এই রচনাকে যদি ফুটবল খেলতে নামিয়ে দেওয়া হত, কেমন হত!‌ এই রচনাকে যদি পিজি হাসপাতালে ডাক্তার সাজিয়ে জটিল কোনও অপারেশন করতে পাঠিয়ে দেওয়া যেত, কেমন হত!‌ যদি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির ক্লাস নিতে পাঠিয়ে দেওয়া হত, কেমন হত!‌ নিশ্চয় ভাল হত না। তাহলে, তাঁকে হঠাৎ সংসদে কারা পাঠাতে চাইছেন!‌ সেখানে বুঝি যাঁকে খুশি পাঠিয়ে দেওয়া যায়!‌

মানুষের জন্য কাজ করব বললেই করা যায় না। যেমনভাবে মিমি–‌নুসরতরা কার্যত কিছুই করে উঠতে পারেননি। তাঁরা হয়তো এমপি ল্যাড খরচ করেছেন, এটাকেই মহান কাজ বলে মনে করতে পারেন। আসলে, এমপি–‌র কাজ কী, সে ব্যাপারে ন্যূনতম ধারণা না থাকলে যা বলতে হয়, তাই বলেন। রচনাও শুরু থেকেই লোক হাঁসিয়ে যাচ্ছেন। একের পর এক এমন বাক্য পরিবেশন করছেন, যা নিয়ে সমাজমাধ্যমে ট্রোলিং শুরু হয়ে গেছে। এই শুষ্ক বঙ্গভূমিতে অনেক হাসির উপাদান দিয়েই চলেছেন। কী কী বলে চলেছেন, তা এর মধ্যেই বহুচর্চিত। আর উদাহরণ নাই বা বাড়ালাম। মোদ্দা কথা, তাঁকে একটি দিনের জন্যও সিরিয়াস বলে মনে হয়নি।

তাঁর উল্টোদিকে যিনি আছেন, সেই লকেটও অভিনয় জগৎ থেকেই এসেছেন। কিন্তু তিনি হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে পড়েননি। রোদে পুড়ে, জলে ভিজে, গ্রামে গ্রামে ঘুরে নিজেকে তৈরি করেছেন। এমপি হওয়ার আগে থেকেই তাঁকে সিরিয়াস রাজনৈতিক কর্মী বলে মনে হত। ভোটের অঙ্কে তিনি হারতেও পারেন, জিততেও পারেন। কিন্তু গত পাঁচ বছরে অন্তত ছ্যাবলামির আশ্রয় নিতে দেখা যায়নি। নিজের দায়িত্ব যথেষ্ট বোঝেন, একজন জনপ্রতিনিধির কী কাজ, কী দায়িত্ব, তার অনেকটাই রপ্ত করেছেন। এটুকু বেশ বোঝা যায়, পদে পদে রাজ্য সরকারের বিরোধিতা না থাকলে তিনি আরও ভাল কাজ করতে পারতেন। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আরও টাকা নিজের কেন্দ্রের জন্য আনতে পারেতন। না, আমি লকেটের দলের সমর্থকও নই। কিন্তু তারপরও লকেট সম্পর্কে এটুকু বলতে পারব না যে, তিনি কিছুই বোঝেন না।

না, রচনার ওপরও কোনও ব্যক্তিগত রাগ নেই। তিনি আবার যখন ‘‌দিদি নম্বর ওয়ান’‌ করবেন, রাগে চ্যানেল ঘুরিয়ে দেব না। যদি আবার রামধনুর মতো ছবি করেন, অবশ্যই দেখব। কিন্তু তিনি একটা প্রতীকমাত্র। তাঁর জায়গায় জুন মালিয়াকে রাখলে তাঁর সম্পর্কেও একই কথা বলতে পারি। এইসব মানুষেরা সংসদে যান, বাংলার প্রতিনিধিত্ব করুন, একজন বাঙালি হিসেবে তা চাই না। তাই রচনা–‌জুনদের পরাজয় চাই। জনতার মোহভঙ্গ হোক। এই তারকাদেরও মোহভঙ্গ হোক।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.