পালে বাঘ পড়ার মতোই দশা হয়েছে শুভেন্দুর

রক্তিম মিত্র

পালে বাঘ পড়ার গল্পটা নতুন নয়। একজন রাখাল গরু চরাতো। একা একা গরু চরাতে কার আর ভাল লাগে!‌ সে মাঝে মাঝেই চিৎকার করত, বাঘ এসেছে। বাকিরাও তাকে বাঁচাতে ছুটে আসত। এসে দেখত, কোথাও কোনও বাঘ নেই। সেই ছেলেটি তাদের ডেকে এনে মজা করছে। এভাবেই বেশ কয়েকবার ছেলেটি বাঘ বাঘ চিৎকার করল। আশপাশ থেকে অন্য রাখালরা এল। ছেলেটি অন্যদের বোকা বানিয়ে বেশ মজাই পেল। অন্যরাও বুঝে গেল, বাঘের নাম করে তাদের ডেকে এনে বোকা বানানো হচ্ছে।
তারপর একদিন সত্যি সত্যিই বাঘ এসে হামলা করল। সেদিনও ছেলেটি ‘‌বাঘ বাঘ’‌ বলে চিৎকার করল। সেই চিৎকার অন্যরা শুনতেও পেল। কিন্তু কেউই আর এগিয়ে এল না। ভাবল, এবারও ছেলেটি বোধ হয় নিছক মজা করছে।

হঠাৎ রাখাল আর বাঘের এই কথা টেনে আনা কেন?‌ শুভেন্দু অধিকারী যেন সেই প্রবাদটাকে মনে করিয়ে দিলেন। মাঝে মাঝেই তিনি এরকম হুঙ্কার ছাড়েন। বছর দেড়েক আগে ডিসেম্বর ধামাকার কথা শুনিয়েছিলেন। তিনটি তারিখের কথা ঘোষণা করেছিলেন। পরে বললেন, ডিসেম্বরে না হোক, জানুয়ারিতে ধামাকা হবেই। জানুয়ারিতে গিয়ে বলেছিলেন ফেব্রুয়ারির কথা। এমন কত মাস পেরিয়ে গেল। ধামাকা তো দূরের কথা, সামান্য কালি পটকাও ফোটেনি। আসলে, শুভেন্দুর চাওয়ায় ভুল ছিল না। শুভেন্দু চেয়েছিলেন, রাঘববোয়াল ধরা পড়ুক। তিনি হয়তো দিল্লি গিয়ে বারবার দাবিও জানিয়েছেন। কিন্তু যাঁরা চাইলে রাঘব বোয়াল ধরা পড়ত, তাঁরা চাননি। তাই রাঘব বোয়াল বহাল তবিয়তে আছেন। উল্টে তিনিই আবার হুমকি দিয়ে চলেছেন।

দিলীপ ঘোষ অনেক আগেই বুঝেছিলেন, দিল্লির কর্তারা দুর্নীতির আসল মাথা খুঁজতে চায় না। তাই সিবিআই ইডিও চায় না। বরং, সেই আসল মাথাদের সুরক্ষিত রাখতে যা যা করা দরকার, সেটাই করা হয়। তাই দিলীপ ঘোষ অন্তত দিল্লি নেতাদের কাছ থেকে কোনও প্রত্যাশাই রাখেন না। তিনি অন্তত জানেন, মোদি–‌অমিত শাহরা যতই বাতেলা দিয়ে যান, তাঁদের মুরোদ কতটুকু। শুভেন্দু হয়তো বোঝেননি। তিনি দিল্লি গেছেন। নেতারা আশ্বাস দিয়েছেন, অপেক্ষা করুন। তিনিও সেই আশ্বাসকে ইতিবাচক ভেবে ফিরে এসেছেন। আর ধামাকার হুমকি দিয়ে গেছেন। আস্তে আস্তে তিনিও বুঝেছেন, দিল্লির নেতাদের দিকে চেয়ে থাকলে কিছুই হবে না। তারপরেও বিস্ফোরণের হুমকি দিলেন কেন?‌ নির্বাচনের সময় দিতে হয়, তাই। তাছাড়া, হাইকোর্টে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সরকারের বিপক্ষে রায় আসতে চলেছে, এমন একটা আন্দাজ মোটামুটি সবাই করতে পারছেন। কিন্তু সেই রায়ে কীই বা হবে?‌ দেখা যাবে, অনেকের চাকরি গেল। তাতে বিরাট উল্লসিত হওয়ার কী হয়েছে?‌ আসল মাথা কারা?‌ কাদের প্রত্যক্ষ নির্দেশে এই দুর্নীতির ডালপালা এতদূর ছড়িয়ে গেল, সেই মাথাদের ধরাটা কি অনেক বেশি জরুরি নয়?‌

তাই, হাইকোর্ট রায় দেবে। সেই রায়কেই শুভেন্দু নিজেদের সাফল্য বলে চালাতে চাইবেন। বলতেই পারেন, সিবিআই তদন্ত করেছিল, তাই এই রায় হল। আরে বাবা, সিবিআই যা পারত, তার পাঁচ পার্সেন্ট হয়তো করেছে। যে পাঁত পারসেন্ট নম্বর পায়, তাকে ফেল করা ছাত্রই বলা হয়। আসল মাথা ধরতে সিবিআইয়ের সাতদিনও লাগত না। কিন্তু তা যখন হয়নি, তখন বুঝতে হবে, সময় নষ্ট করাই তাদের আসল উদ্দেশ্য। এবং সেই নির্দেশটাও এসেছে সর্বোচ্চ জায়গা থেকেই।

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.