এত অসহিষ্ণুতা কেন?‌

অমিত ভট্টাচার্য

হঠাৎই যেন চমকে দেওয়ার মতো খবর। বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলি পদত্যাগ করছেন। তিনি রাজনীতির ময়দানে নামতে চান। কোন দলের হয়ে নামতে চান, তিনি নিজে ঘোষণা না করলেও বুঝতে বাকি রইল না।

দু–‌তিনদিন চলল নানা জল্পনা। তিনি কোথায় যোগ দেবেন। কেউ বললেন, বাম শিবিরে। কংগ্রেসও স্বাগত জানিয়ে রাখল। অনেকেই বললেন, তিনি যাবেন বিজেপিতে। যদিও শেষের পাল্লাটাই ভারী, এমনটা বোঝাই যাচ্ছিল। এমনকী, কোন কেন্দ্রে দাঁড়াবেন, তাও প্রচার হয়ে গেল।

বিষয়টা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কী চর্চা হচ্ছে, তা বুঝতে একটু চোখ রাখা। বামেদের একটা বড় অংশ ধরে নিয়েছিলেন, তিনি হয়তো বাম শিবিরেই আসছেন। আশা করতে বাধা নেই। এমনকী দায়িত্বশীল লোকেরাও (‌যাঁটা টিভিতে মুখপাত্র হয়ে আসেন)‌ লিখতে শুরু করলেন, ‘‌বিচারপতি বিজেপিতে যাচ্ছেন বলে যে প্রচার হচ্ছে, সেটা ঠিক নয়। অপেক্ষা করুন। দেখতে পাবেন।’‌ কমেন্ট বক্সে বিচারপতির ঢালাও প্রশস্তি। কেউ কেউ তাঁকে ঈশ্বর বানিয়ে দিলেন। তাঁর হাত ধরে বামেরা ঘুরে দাঁড়াবে, এমন আশার বাণীও শোনা গেল।

কিন্তু যেই না তিনি বিজেপিতে যাবেন ঘোষণা করলেন, অমনি রাতারাতি সুর বদলে গেল। যাঁরা একদিন বা দুদিন আগেও ভগবান বানিয়েছিলেন, তাঁরাই দেখলাম, শয়তান, লোভী, ধান্দাবাজ— এমন বিশেষণ প্রয়োগ করতে লাগলেন। তিনি বামে এলেই ভাল, আর না এলেই তাঁর মতো খারাপ লোক হয় না। এরকম একটা নির্যাস যেন বেরিয়ে এল। এই সুরে সবাই সুর মিলিয়েছেন, এমনটা নয়। কিন্তু এটাই যেন মূলস্রোত হয়ে দাঁড়াল। যে ভাষায় কল্যাণ ব্যানার্জি আক্রমণ করছেন, বামেদেরও কেউ কেউ দেখলাম প্রায় কাছাকাছি ভাষায় আক্রমণ শানাতে শুরু করে দিয়েছেন। মনে পড়ে গেল সেই পুরনো প্রবাদটা— আঙুর ফল টক।

এরই মাঝে মহম্মদ সেলিমের একটা সাক্ষাৎকার শোনার সুযোগ হল। তিনি অকপটেই মেনে নিলেন, ‘‌বামেরাও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কথাবার্তা অনেকদূর এগিয়েও ছিল।’‌ সরাসরি বামেদের প্রতীকে হয়তো দাঁড়াতেন না। কিন্তু জোট সমর্থিত নির্দল বা এই জাতীয় কোনও মোড়কে তাঁকে নামাতে বামেদেরও আপত্তি ছিল না। বরং, বেশ সম্মতিই ছিল। তাহলে, হঠাৎ এই উল্টো সুরে গাওয়া কেন?‌ হঠাৎ, তাঁর এতদিনের প্রতিবাদী ভূমিকাকে ছোট করে দেখার ও দেখানোর চেষ্টা কেন?‌ এক উঠতি আইনজীবী বলে বসলেন, ‘‌এরকম একজন লোককে নেওয়া হলে আমি সদস্যপদ ছেড়ে দিতাম।’‌ গোটা ইন্টারভিউ জুড়ে যে ঔদ্ধত্য প্রকাশ পেল, যে নোঙরা ভাষায় আক্রমণ করে গেলেন, মোটেই ভাল লাগেনি। এমনকী বিচারপতি হিসেবে জাস্টিস গাঙ্গুলি কতটা খারাপ, সেটাই যেন প্রমাণ করার চেষ্টা চালিয়ে গেলেন। এত কীসের আস্ফালন?‌ কী বলছেন, তার কী মানে দাঁড়ায়, এটুকু বোঝার মতো বিচক্ষণতা যাঁর নেই, তিনি কিনা টিভিতে বামেদের প্রতিনিধি!‌ তাঁকে কিনা বিভিন্ন জেলায় বক্তা হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়!‌ তিনি নাকি সম্ভাব্য প্রার্থী!‌

অভিজিৎ গাঙ্গুলির রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে আপত্তি থাকতেই পারে। তাই বলে তাঁকে এভাবে আক্রমণ করতে হবে?‌ একটু সহিষ্ণুতা, একটু শিষ্টাচার কি আশা করা যায় না?‌ কোথায় থামতে হয়, সেটা এই অর্বাচীনদের শেখানো সত্যিই বড় জরুরি।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.