পলাশ দেখতে নয়, শীতের সময় আসুন

বিপ্লব মিশ্র

শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা। সেই কোনকাল আগে লিখেছিলেন কবি ভাস্কর চক্রবর্তী। এখন শীত কখন যে আসে, আর কখন যে ফুরিয়ে যায়, বোঝাও যায় না। শরৎ, হেমন্ত এসব ঋতুগুলো ঋতুচক্র থেকে কবেই বিদায় নিয়েছে। এখন দিন পনেরো বর্ষাকাল। দিন পনেরো শীতকাল। বাকি এগারোমাস মোটামুটি গরম কাল। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও একবার ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন, শীতের মেয়াদ সত্যিই মেরেকেটে পনের–‌কুড়ি দিন।

মোটামুটি ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকেই গরম পড়া শুরু হয়ে যায়। এখন ফেসবুকের কল্যাণে বেড়ানোর হরেকরকম গ্রুপ। এই মুহূর্তে কেউ দার্জিলিংয়ের ছবি পোস্ট করছে, তো পরমুহূর্তেই অন্য কেউ পোস্ট করছে পুরুলিয়ার ছবি। এখন তো আবার পলাশের সময়। গাছে গাছে লাল পলাশ ধরে আছে। রাস্তায় সেই পলাশ পড়ে আছে। দৃশ্যগুলো দেখলেই মনে হয়, চলে যাই সেই পলাশের দেশে।

হোলির ঠিক আগে যেন বাঁকুড়া–‌পুরুলিয়ায় যাওয়ার ধুম লেগে যায়। ট্রেনে টিকিট পাওয়া যায় না। হোটেলে ঘর পাওয়া যায় না। সব নাকি অনেক আগে থেকেই বুকড। সবার ধারণা, এই সময়টায় নাকি বাঁকুড়া বা পুরুলিয়া যাওয়ার আদর্শ সময়। কিন্তু যাঁরা গেছেন, তাঁরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন।

বড়ন্তির ড্যাম ছবিতে দেখতে সত্যিই দারুণ লাগে। যেমন লাগে মুকুট মণিপুর বা জঙ্গল মহল। কিন্তু সকাল আটটার পর থেকে আর বাইরে থাকতে পারবেন না। ভোরবেলায় একবার বেড়িয়ে এলেন। ছবি তুললেন। এই পর্যন্ত ঠিক আছে। তারপর সারাদিন আপনাকে কার্যত হোটেলেই কাটাতে হবে। বেরোলেই গায়ে ছ্যাঁকা লেগে যাবে। মোটামুটি বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত গৃহবন্দিই থাকুন। বিকেল দিকে একটু হাওয়া দিলে হয়ত একটু ঘুরতে পারবেন।

আসলে, বাঁকুড়া–‌পুরুলিয়ার পর্যটন ব্যবসা দাঁড়িয়ে থাকে মোটামুটি নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারির ওপর। এই তিন মাসই মোটামুটি ঘোরা যায়। কিন্তু এই তিন মাসে বাঙালি বাঁকুড়া–‌পুরুলিয়ার নাম করবে না। তখন তাঁরা যাবেন দূরদূরান্তে। কেউ কাশ্মীর তো কেউ রাজস্থান। কেউ দক্ষিণে তো কেউ উত্তরে। ঠিক গরম পড়ার পরই বাঁকুড়া–‌পুরুলিয়ার কথা মনে পড়ে। যেন, এই সময় ছাড়া আর যাওয়া যায় না। যেন পলাশ ছাড়া আর কোনও সৌন্দর্য নেই।

এই দুটি জেলাই অনেক প্রাচীন। অনেক সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে। লোক সংস্কৃতি আছে। পাহাড় আছে, জঙ্গল আছে, নদী আছে। প্রাচীন সব মন্দির ও জনপদ আছে। অনেক গুণী মানুষের জন্ম এই দুই জেলায়। তাই এই দুই জেলায় আসতে হলে শীতে আসুন। ভাল করে ঘুরুন। শখ করে পলাশ দেখতে এসে গরমে এসি হোটেলবন্দি থাকার চেয়ে শীতের রোদ গায়ে মেখে হেঁটে বেড়ান। প্রকৃতির রূপ, রস, গন্ধ নিন।

দোহাই, পলাশ পলাশ করে নেচে উঠবেন না। মার্চ এপ্রিল মোটেই এই রুক্ষ মাটির দেশে আসার সময় নয়। আসতে হলে শীতে আসুন। তবেই এই দুই রত্নগর্ভা জেলাকে চিনতে পারবেন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.