প্রশান্ত বসু
ভোটের দিন কবে ঘোষণা হবে? অনেক আগে থেকেই এ নিয়ে জল্পনা চলছিল। কেউ কেউ ভেবেছিলেন, রাম মন্দির উদ্বোধনের পরই হয়তো ঘোষণা হয়ে যাবে। কিন্তু মার্চ গড়িয়ে গেল। বোঝা গেল, তখনও হাত থেকে আরেকটা তাস ফেলা বাকি। রাম মন্দিরের হাওয়া থিথিয়ে গেছে। বাজারে নতুন কিছু ছাড়া দরকার। অতএব সিএএ। ভোটের মুখে বাজার গরম করার, আলোচনাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার আরেক মোক্ষম দাওয়াই।
নির্বাচন কমিশন কবে দিন ঘোষণা করবে, তার অপেক্ষায় বসে না থেকে অনেক দলই আগাম প্রার্থী ঘোষণা করে দিল। বিজেপি প্রথম দফায় দুশো জনের নাম জানিয়ে দিল। যে তালিকায় এই রাজ্যের কুড়ি। আবার তৃণমূল তো ব্রিগেড থেকেই বিয়াল্লিশ প্রার্থীকে র্যাম্পে হাঁটিয়ে দিল।
কিন্তু ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পর দেখা গেল, ৮৩ দিন ধরে ভোট পর্ব চলবে। এমনিতেই অনেক আগে দামামা বেজে গেছে। ভোটের ফল বেরোনো পর্যন্ত কাদা ছোড়াছুড়ি চলবে। এমনকী সরকার গঠনের পরেও বেশ কিছুদিন ভোটের রেশ থাকবে। মোদ্দা কথা হল, অন্তত চার মাস দেশে উন্নয়নের কাজ কার্যত স্তব্ধ হয়ে থাকবে। এত বড় একটা দেশ, প্রায় দেড়শো কোটি মানুষ। সেই দেশ চারমাস কার্যত স্তব্ধ হয়ে থাকবে? উন্নয়নের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না!
এই রাজ্যে সাত দফা। মানছি, এই রাজ্যে যে হারে হিংসা আর জবরদখলের রাজত্ব চলছে, তাতে কোনওভাবেই এক দফা বা দু’দফায় সম্ভব নয়। তাই বলে সাত দফা! এতে সমস্যা আরও বাড়বে না তো? নির্বাচন কমিশনের কর্তারা বিভিন্ন দল ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে সূচি তৈরি করেছেন। কোথা থেকে কোথায় বাহিনি পাঠানো সুবিধা, সেগুলো হয়তো আলোচনায় উঠে এসেছে। কিন্তু সাদা চোখে কতগুলো বিষয় দেখা যায়। যেগুলো হয়তো নির্বাচন কমিশনের নজর এড়িয়ে গেছে।
ভোটে সবথেকে বেশি হিংসার আশঙ্কা কোথায়? কলকাতা ও দুই ২৪ পরগনা। অথচ, অন্যান্যবারের মতোই এইসব এলাকায় ভোট সবার শেষে। অর্থাৎ, এইসব এলাকায় উত্তেজনা অকারণে দেড় মাস জিইয়ে রাখা হল। শুরুতে যদি বাহিনি দিয়ে কলকাতা ও লাগোয়া অঞ্চলের ভোট করিয়ে নেওয়া যেত, উত্তেজনা অনেকটাই প্রশমিত হয়ে যেত। তারপর ধীরেসুস্থে দক্ষিণ বঙ্গে বা উত্তরবঙ্গে ভোট হতে পারত।
নির্বাচন কমিশন প্রতিবারই হুঙ্কার ঝাড়ে, কোনও হিংসা বরদাস্ত করা হবে না। ইত্যাদি ইত্যাদি। বাস্তবে দেখা যায়, সবই ফাঁকা আওয়াজ। দু একজন পুলিশ কর্তাকে লোকদেখানো সরানো হয়। লোকে ভাবে, কমিশন বুঝি দারুণ কড়া। অথচ, ভোটের দিন বাহিনির দেখাই পাওয়া যায় না। জেলা প্রশাসন ইচ্ছমতো তাদের ব্যবহার করে। কোথাও কোথাও বসিয়ে রাখে। কারণ, জেলা প্রশাসনের কর্তারা ভাল করেই জেনে গেছেন, এই কমিশনের দৌড় কতদূর। তাঁরা ভাল করেই জানেন, কমিশন বড়জোর কয়েকদিন দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেবে। ভোট চুকলেই তাঁরা আবার স্বপদে বহাল হয়ে যাবেন। এত হিংসাত্মক ভাষণ, এত অনিয়ম, নির্বাচন কমিশন কজনের প্রার্থীপদ বাতিল করতে পেরেছে? এমনকী কোন কোন বুথে ঝামেলা হতে পারে, তার নির্দিষ্ট তালিকা আগাম জমা দেওয়ার পরেও সেইসব বুথে কোনও বাহিনি দেওয়া হয়নি। অবাধে ছাপ্পা হয়েছে। এমনকী, সকাল দশটাতেই সব ভোট পড়ে গেছে।
তাই কমিশন বরং হুঙ্কার না ঝেড়ে কিছুটা হলেও নিজেদের কাজ করে দেখাক। সিবিআই, ইডি নামের দুই রাষ্ট্রযন্ত্র যেমন অপদার্থতার চূড়ান্ত নিদর্শন দেখিয়ে যাচ্ছে, নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকেও খুব বেশি প্রত্যাশা না রাখাই ভাল। নির্বাচন কমিশন আগে অন্তত বিশ্বাসযোগ্যতার পাসমার্ক অর্জন করুক। তারপর না হয় হুমকি দেবে।