অনেক টিকি ওই টিকিটেই বাঁধা

অজয় নন্দী

ইডেনে খেলা এলেই সিএবি কর্তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। কত টিকিট তোলা যায়। কত টিকিট কাকে কাকে দেওয়া যায়। তিনি টিকিট দিতে পারেন, এটাই তাঁর ইউএসপি। এটাকে ভাঙিয়েই সারা বছর চলতে হয়। এই অঙ্কের কাছে বাকি সব অঙ্কই যেন নিতান্ত তুচ্ছ। রনজিতে বাংলা কেন এভাবে হারল, ক্লাব ক্রিকেটে কেন এমন অবস্থা, তা নিয়ে সময় ব্যয় করতে বয়েই গেছে।

এমন একটা নির্লজ্জ গড়াপেটার পর সিএবি কী করতে পারত?‌ সদিচ্ছা থাকলে অনেককিছুই করা যেত। সিএবির সংবিধানেই সেই ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু যে কোনও তদন্তকে ধামাচাপা দেওয়ার সেরা উপায় হল, কোনও একটা কমিটি তৈরি করে দাও। হাতে একটা লম্বা সময় রাখো। কমিটির কোনও মিটিংও হবে না।
ব্যস, কদিন পর সবাই দিব্যি ভুলে যাবে। সিএবি ঠিক সেটাই করল।

অভিযোগ ছিল মহমেডান ও টাউন ক্লাবের ম্যাচকে ঘিরে। এমন চোখে আঙুল দেওয়া ভিডিও দেখার পর আর অভিযোগ বলি কী করে?‌ একেবারে হাতেগরম প্রমাণ বলতে যা বোঝায়, তাই। যাঁরা সামান্যতম ক্রিকেট খেলেছেন বা ক্রিকেট সম্পর্কে যাঁদের সামান্যতম আগ্রহও আছে, তাঁরা একঝলক দেখেই বুঝতে পারবেন কোন স্তরের নির্লজ্জ গড়াপেটা হয়েছে। তারপরেও সিএবি কর্তারা কী অদ্ভুতভাবে তাকে আড়াল করতে উঠেপড়ে লাগলেন!‌

এমন নির্লজ্জ গড়াপেটার তদন্তের জন্য কোনও কমিটি লাগে না। বরং ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই কমিটি লাগে। বাংলা ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা ঠিক সেটাই করল। কখনও অমুক কমিটি দেখাল, কখনও অ্যাপেক্স কাউন্সিল দেখাল। ভাবতে অবাক লাগে, এই সিএবির মাথায় বসে আছেন স্নেহাশিস গাঙ্গুলির মতো ক্রিকেটার। নয়ের দশকে কর্ণাটকের বিরুদ্ধে রনজি ম্যাচে ভাঙা পা নিয়ে কী দুরন্ত, কী সাহসী ইনিংসটাই না খেলেছিলেন!‌ যেন রূপকথার মতো। আজও যেন চোখের সামনে ভাসে। অথচ, চেয়ারে বসে সেই স্নেহাশিসের কী করুণ পরিণতি!‌

মানছি, ঘরোয়া লিগে এমন গড়াপেটা এই প্রথম নয়। কান পাতলে এমন অনেক ম্যাচের কথাই শোনা যায়। কিন্তু এই ম্যাচ যে সব লজ্জাকে ছাপিয়ে গেছে। এই ম্যাচের যে জলজ্ব্যান্ত প্রমাণ রয়েছে। তারপরেও সিএবি কর্তা সেই ভিডিওতে নয়, কাগজে লিখে কে কী রিপোর্ট দিয়েছেন, তার ওপর ভরসা রাখার কথা বললেন। যাঁদের খেলোয়াড়েরা এমন নির্লজ্জভাবে ইচ্ছাকৃত আউট হলেন, সেই মহমেডান পর্যন্ত অস্বীকার করেনি। তারপরেও টাউনের এক প্রভাবশালী কর্তাকে রক্ষা করার এত কীসের তাগিদ?‌

বাংলা মিডিয়া একটা স্তর পর্যন্ত গেল। তারপর নানা অঙ্কে থেমে গেল। ইনি বলেন এই, তিনি বলেন ওই। এই আবর্তেই ঘুরপাক খেতে লাগল। সবথেকে বড় কথা, ভিনরাজ্যের কোনও খেলোয়াড়কে ক্লাব ক্রিকেটে খেলাতে বোর্ডের ছাড়পত্র লাগে না, এই সাধারণ নিয়মটুকুও সিএবি কর্তারা জানতেন না!‌ এঁরা ক্লাব চালাচ্ছেন?‌ এঁরা সিএবি চালাচ্ছেন?‌

এরপরেও হইচই হবে না। এতবড় একটা অপরাধকে লোকদেখানো ‘‌ভুল’‌ বলে দিব্যি পার পেয়ে যাবেন কর্তারা। কোনও প্রশ্ন উঠবে না। ওই যে, টিকিটে অনেক টিকি বাঁধা।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.