ওপেন ফোরাম
ধীমান সাহা
ভোটের দামামা বেজেই গেল। দিন ঘোষণার আগেই শাসকদল এক তৃতীয়াংশের বেশি আসনে প্রার্থীও ঘোষণা করে দিল। দিকে দিকে উদ্বোধন আর শিলান্যাসের তৎপরতা। আগামী দুই–আড়াই মাস একেবারে অন্য খাতে বইবে দেশের জনজীবন। দল ভাঙানোর পর্ব যেমন চলবে, একে অন্যকে আক্রমণের পর্ব চলবে। আক্রমণের পর মুহূর্তেই থাকবে পাল্টা আক্রমণ। এই নিয়েই মেতে থাকবে গণমাধ্যম। এই নিয়েই মেতে থাকবে জনজীবন।
কিন্তু এই দেশের যারা চালিকাশক্তি, সেই যুবসমাজের সামনে সত্যিই কি নতুন কোনও দিশা এনে দেবে এবারের নির্বাচন। শিল্পস্থাপন, নতুন কর্ম সংস্থানের ব্যাপারে সত্যিই কি ততটা চিন্তিত রাজনৈতিক দলগুলো? হয়তো, সেই কারণেই ভোট নিয়ে দারুণ কোনও আগ্রহও নেই। নতুন কোনও আশার আলোও নেই। তাঁদের কাছে ভোট মানে একটা ছুটির দিন। বলা যায়, একটা উৎসবেরও দিন। তাঁর ভোটে যে বিরাট কিছু হবে, সে হয়তো বিশ্বাসও করে না। নিছক অভ্যেসের বশেই ভোট দেয়। অথবা, অনেকে দেয় না। যারা চাকরির সুবাদে বাইরে থাকে, তারা ভোটের জন্য বাড়ি ফেরার সেই তাগিদও অনুভব করে না।
রাজনীতি মানে কী? নীতির রাজা? নাকি রাজার নীতি? না নিয়েই ঘোর সংশয়। যেন তেন প্রকারেণ ক্ষমতা দখলই যেন একমাত্র লক্ষ্য। ক্ষমতা দখল করতে পারলেই তুমি সফল। আর না পারলেই তুমি ব্যর্থ। যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকে, তাহলে অন্য দল থেকে ভাঙিয়ে আনো। সে কোন মতের, কোন পথের, ভাবার দরকার নেই। প্রথমে দরজা খুলে দাও। কেউ কেউ এমনিই এসে যাবে। না এলে, তখন একটু লোভ দেখাও। তাতেও কাজ না হলে ভয় দেখাও। আয়ারাম–গয়ারামরা আসা যাওয়া করতেই থাকে। সব দলেই এমন আয়ারাম–গয়ারামের অভাব নেই। এক দলের টিকিটে জিতে কী অনায়াসে অন্য দলে চলে যেতে পারেন। অন্য দলের টিকিটে জেতা কাউকে কী অনায়াসে একটি দল বরণও করে নেয়। এই যদি মূলস্রোত হয়, তবে কাদের ওপর ভরসা রাখবে আমজনতা?
ভোটের মধ্যে এসে যায় ধর্মের প্রচার। একদল সংখ্যালঘুদের তোষণ করে, তো অন্য দল সংখ্যালঘুদের গাল পেড়ে, ঘৃণা ছড়িয়ে ভোট ব্যাঙ্ক বাড়াতে চায়। আখেরে সেই ভোট ব্যাঙ্ক। আর দিনের পর দিন, বছরের পর বছর, এই সুড়সুড়িতে একটা অংশ বিশ্বাসও করে। সেই সংখ্যাটা খুব অল্প নয়।
নির্বাচন মানেই প্রতিশ্রুতির ফোয়ারা। সেই প্রতিশ্রুতি কতটা পূরণ হবে, তা ভাবার দায় নেই। এমনকী, সেই প্রতিশ্রুতির কথা শাসকেরা বেমালুম ভুলেও যায়। জনতাও ভুলে যায়। তখন শাসকের তৈরি করা ধর্ম–মন্দির এসব নিয়ে মেতে ওঠে। এসব নিয়ে চায়ের দোকানে তুফান তোলে। ফেসবুকে লাইক মেরে যায়। বিরোধীরাও নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে কতটা সচেতন!
আজ যে বিরোধী, কাল সে শাসক শিবিরে ভিড়ে যাবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়! আবার কোন ইস্যুতে বিরোধিতা করতে হয়, কোন ইস্যুতে চুপ থাকতে হয়, সেই পরিমিতি বোধটাও থাকে না। বিরোধিতা করতে গেলেও লেখাপড়া লাগে, চর্চা লাগে, পরিশ্রম লাগে, বিশ্বাসযোগ্যতা লাগে। অধিকাংশ বিরোধীর মধ্যে সেই প্রাথমিক দিকগুলোই নেই। আর যাই হোক, এই বিরোধীদের ওপরও সেই আস্থা রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
একে শাসক শক্তিমান। তার ওপর বিরোধীরা আরও ছত্রভঙ্গ। জনতা যাবে কোনদিকে?