পয়লা বৈশাখ বা একুশে ফেব্রুয়ারি এলেই হল। আমাদের মোবাইলে কতগুলো লাইন ঘুরেফিরে এসে যায়। কেউ লেখেন ‘মোদের গরব মোদের আশা/ আ মরি বাংলা ভাষা।’ কেউ লেখেন, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি।’ এই একটা দিন আমরা যেন একটু বেশি করেই বাঙালি হয়ে উঠি।
আসলে, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে ঘিরে আমাদের অনুরাগ যেন বিশেষ একটা বা দুটো দিনের জন্যই তোলা থাকে। বছরের বাকি দিনগুলিতে যেন বাঙালি হওয়ার কোনও দায় নেই। বাকি দিনগুলিতে বাংলাকে উপেক্ষা করাই যেন দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলা ভাষার অধিকার রক্ষার দাবিতে আমাদের পড়শি দেশের মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। এমনকী আমাদের বরাক উপত্যকাতেও লড়াই হয়েছে বাংলা ভাষার দাবিতে। অথচ, আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে বাংলাকে আমরা একরকম নির্বাসন দিয়ে বসে আছি। আমাদের ক’জনের বাড়ির ছেলে মেয়েরা বাংলা মাধ্যমে পড়ে! কজন একপাতা বাংলা পড়তে পারে? এক পাতা বাংলা লেখা তো অনেক দূরের কথা।
আচ্ছা, আমরা শেষ কবে একটা গোটা বাংলা বই পড়েছি? কেউ কেউ নিশ্চয় পড়েন। কিন্তু আয়নার সামনে যদি সবাইকে দাঁড় করানো হয়, ছবিটা খুব একটা উজ্জ্বল হবে না। হলে গিয়ে বাংলা ছবি। কজন দেখি? শেষ কবে অ্যাকাডেমিতে নাটক দেখেছেন? মানছি, এত ব্যস্ততার আবহে ঘনঘন নাটক দেখা সম্ভব নয়। বছরে একটা তো সম্ভব। সেটুকুও দেখেছি! তাছাড়া, এইসব নাটক এখন ইউটিউবেও পাওয়া যায়। কজন দেখেছি? বাংলা গান। শেষ কবে টানা আধঘণ্টা বাংলা গান শুনেছি! এখন বাংলা সফ্টওয়্যারও সহজলভ্য। ফেসবুকে দু–এক লাইনের পোস্ট দেওয়ার বাইরে আর কতটুকু প্রয়োগ করেছি?
আচ্ছা, কলকাতায় এত এত বাঙালি থাকেন। রোজ কাজের প্রয়োজনে লক্ষ লক্ষ মানুষ আসেন। তাঁদের মধ্যে কজন জোড়াসাঁকো বা নেতাজি ভবনে গেছেন? বাংলায় এত এত মনীষী জন্মেছেন। তাঁদের কজনের বাড়ি চিনি? তাঁদের কজনের সম্পর্কে দু–চার পাতা পড়েছি? আসল, কথা হল, বাঙালি হওয়ার জন্য আমরা কতটুকু গর্বিত? আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বাংলাই বা কতটুকু!
একুশে ফেব্রুয়ারি তাই নিছক পাঞ্জাবি পরার দিন নয়। হোয়াটস্অ্যাপে কয়েকটা চেনাজানা মেসেজ ফরোয়ার্ড করার দিন নয়। এই দিনটা একটু একটু করে বাঙালি হয়ে ওঠার দিন। এবারের একুশে ফেব্রুয়ারি না হয় সেই অভিমুখে একটু একটু করে পথ চলা শুরু হোক।