কোয়েস–‌ইমামি বুঝি সর্বহারা!‌

ময়ূখ নস্কর

দাদা, আপনি কি বাঙাল?
তাহলে একদিন আমার বাড়িতে আসুন। ঘটি বাঙাল নিয়ে তর্ক করতে আমার দারুণ লাগে। আরে শুধু তর্ক নয়, জয়নগরের মোয়া খাওয়াবো। এমন মোয়া পশ্চিমবঙ্গেই হয়। কী বললেন, ঘটিরা রান্না করতে পারে না? বেশ তো, আপনার রান্না আপনি নিয়ে আসবেন। খেতে খেতে তর্ক করব।

দাদা, আপনি কি বাঙাল+ইস্টবেঙ্গল?
আপনি মশাই আমার দুশমন, কিন্তু তাও আমার বাড়িতে আসুন। মোহনবাগান–‌ইস্টবেঙ্গল নিয়ে তর্ক করতে আমার দারুণ লাগে। আরে বাগবাজারের রসগোল্লা খাওয়াব। আচ্ছা, বেশ আপনার আনা মিষ্টিও খাব। খেতে খেতে তর্ক হবে। আপনি আমাকে মাচা বলবেন, আমি আপনাকে লোটা বলব। দারুণ জমবে।

দাদা, আপনি কি বাঙাল+ইস্টবেঙ্গল+বামপন্থী?
আরে কমরেড বুকে আসুন। মায়ের হাতে রান্না করা গলদা চিংড়ি খাওয়াবো আপনাকে। হ্যাঁ হ্যাঁ আপনার মায়ের রান্না করা ইলিশ মাছও খাব।

দাদা, আপনি কি বাঙাল+ ইস্টবেঙ্গল + বামপন্থী + হ্যাজ নামানো পাবলিক? সেই সব হ্যাজে ইস্টবেঙ্গল জিতলে স্তালিনগ্রাদ, ভিয়েতনাম, সর্বহারার জয় ইত্যাদি গা গরম ডায়লগ থাকে? তাহলে দাদা আপনি আমার ত্রিসীমানায় আসবেন না। কারণ, আপনি অতীব জালি ও ঢ্যা_মনা মাল।

আপনি বাঙাল হতে পারেন, ইস্টবেঙ্গল হতে পারেন, কিন্তু বামপন্থী আপনি নন। আপনার ক্লাবও সর্বহারার ক্লাব নয়। আপনাদের ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতাদের কেউই সর্বহারা ছিল না। আপনাদের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রাজা মন্মথ রায়চৌধুরী, প্রথম সভাপতি ছিলেন সারদারঞ্জন রায়, আপনাদের হ্যাজের ভাষায় তাঁরা সবাই অভিজাত, জমিদার, শ্রেণীশত্রু। আপনাদের স্বর্ণযুগের কর্তা অজয় শ্রীমানিও প্রলেতারিয়েত ছিলেন না। এই ক্লাব কীভাবে সর্বহারার দল হতে পারে? এই ক্লাবের সমর্থকরা কীভাবে মোহনবাগানকে জমিদারদের দল বলতে পারে?

হ্যাঁ বলতে পারে, কারণ আপনাদের মতো, অর্থাৎ ইস্টবেঙ্গল + হ্যাজ নামানো বামপন্থীদের মতো ধান্দাবাজ, দু’‌নম্বরী মার্কেটে দ্বিতীয়টি নেই। মালিয়া, কোয়েস, বাঙ্গুর, ইমামির অর্থে পুষ্ট হয়ে আপনারা পুঁজিবাদ উচ্ছেদের স্বপ্ন দেখেন। নবান্নের দুয়ারে হত্যে দিয়ে আপনারা বামপন্থার বড়াই করেন। আপনারা যদি বামপন্থী হন, তাহলে হিটলারও বামপন্থী। কারণ, সেই খ_চ্চরের পার্টির নামেও ‘‌সোশ্যালিস্ট’‌ শব্দটি ছিল।

যদি আপনারা সাচ্চা বামপন্থী হতেন, তাহলে আপনার প্রিয় দলকে নবান্নে হত্যে দিতে দেখলে লজ্জাবোধ করতেন। আপনাদের প্রিয় দল ট্রফি জিতে কালীঘাটের হাজিরা খাতায় সই করতে যাচ্ছে এই দৃশ্য দেখলে একদলা থুথু ফেলতেন।

আর যদি বাস্তববোধ থাকত, তাহলে স্বীকার করতেন সর্বহারা কখনও ক্লাব বানাতে পারে না। পুঁজি ছাড়া ক্লাব চলে না। কাজেই মোহনবাগান জমিদারদের ক্লাব আর ইস্টবেঙ্গল সর্বহারাদের ক্লাব এটা স্বপ্নদোষ ছাড়া আর কিছু নয়। আপনাদের সেই স্বপ্নদোষ আছে বলেই আপনাদের বামপন্থার সঙ্গে খগেন মুর্মুর বামপন্থা, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বামপন্থার তফাৎ নেই। আপনারা যখন যে কথা বললে বেশি লাইক পাওয়া যায়, তখন সেই কথা বলেন। যখন যেখানে ভিড়লে বেশি ফায়দা লোটা যায়, তখন সেখানে ভেড়েন।

আরও জেনে রাখুন, ফুটবল খেটে খাওয়া মানুষের সমর্থনের জোরেই বেঁচে থাকে। সব দেশে সব ক্লাবে। সেই খেটে খাওয়া মানুষকে অপমান যদি কেউ করে থাকে সেটা আপনারা।
কোয়েসকে স্পন্সর হিসেবে পেয়ে আপনারা ভিখারি মাচা ব্যানার লিখে মিছিল করেছিলেন। তখন আপনার মনে হয়নি এটা সর্বহারার অপমান? নাকি তখন আপনার বামপন্থী বিবেক চক্ষু বুঝে হস্ত_মৈথুন করছিল।

বিপক্ষ দলের গরিব সমর্থকদের এক টাকার কয়েন ছুড়ে, সেই টাকার ছবি ফেসবুকে লটকেছিলেন। তখন আপনার মনে হয়নি এটা বামপন্থার অপমান? নাকি তখন আপনার বামপন্থী বিবেক উদাত্ত কণ্ঠে টুম্পা সোনাকে নিয়ে ব্রিগেড যাওয়ার গান গাইছিল?

তারপর সেই ভিখারির দল যখন আপনাদের মুখে ঝামা ঘষে দিয়ে আই লিগ জিতল তখন আপনার মনে হয়নি এটা সর্বহারার জয়? নাকি তখন আপনার বামপন্থী বিবেক গ্যালারি থেকে “চা চিনি দুধে” টিফো ঝোলাচ্ছিল।
আপনি ভেবেছিলেন সুন্দরবনের জেলে, হাওড়ার বন্ধ কারখানার শ্রমিক, বর্ধমানের খেতমজুর, হুগলির হকার সবাই ভিখারি আর আপনারা বাঙলা বিহার উড়িষ্যার নবাব।
তারপর মাচারা টাকার সন্ধান পেতেই ভিখারিরা হয়ে গেল জমিদার আর চটিচাটা নীতু হলো সর্বহারা। তখন আপনার বামপন্থী বিবেক জেগে উঠে হ্যাজ লিখতে শুরু করল। জ্যোতি বসু যে দলের সমর্থক, কমল বসু যে দলের সমর্থক সেই দল হল জমিদারের দল আর মমতা ব্যানার্জি যে দলকে স্পন্সর এনে দেয়, সেই দল হল বামপন্থী। আপনাদের ডিগবাজি দেখে মুকুল রায় লজ্জা পায়।

শুনুন দাদা, দুটি দলই তৈরি করেছে অভিজাতরা, দুটি দলের পিছনেই টাকা ঢেলেছে পুঁজিপতিরা, দুটি দলকেই সমর্থন করেছে খেটে খাওয়া মানুষ। এখানে স্তালিনগ্রাদ, ভিয়েতনাম, সর্বহারা কোথা থেকে আসে হে? এটা যদি সর্বহারার জয় হয়, আপনারা যদি বামপন্থী হন তাহলে নচিকেতাও বামপন্থী। সেও মমতার মধ্যে লেনিনকে দেখতে পায়। আব্দুর রাজ্জাক মোল্লাও বামপন্থী। সেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে কাঁচা চুলের মদ্দ ছেলে দেখতে পায়।

সাফ কথা শুনুন, আপনি যদি বাঙাল হন, ইস্টবেঙ্গলও যদি হন, আপনি আমার ভাই। যদি বামপন্থী হন আপনি আমার কমরেড। কিন্তু খেলা নিয়ে সর্বহারার হ্যাজ নামাতে এলে বামপন্থা, কমরেড সব ভুলে আপনাকে নিজের হাতে খাওয়াবো…
জুতোর বাড়ি। যেমন তেমন জুতো নয়, হাওয়াই চটি।
হাওয়াই চটি খেতে তো আপনাদের আজকাল ভালই লাগে।
‌‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.