অজয় নন্দী
তিনি কোথায়? কেউই ঠিকঠাক জানেন না। না জানেন নির্বাচকরা। না জানেন বোর্ডকর্তারা। অন্তত জানলেও সরকারিভাবে কেউ স্বীকার করছেন না। কিন্তু তিনি প্রথম দুটি টেস্টে খেললেন না। আচ্ছা, পরের তিন টেস্টে কি খেলবেন? না বলতে পারছেন অধিনায়ক না বলতে পারছেন কোচ। আর নির্বাচকরাও বলার মতো জায়গায় নেই।
তিনি আসলে আছেনটা কোথায়? এমনিতে নানা সময় প্রচুর ছবি ছাড়েন। বোঝা যায়, কোথায় আছেন, কী করছেন। কিন্তু শেষ কয়েকদিন সোশ্যাল মিডিয়াতেও তিনি নেই। কোথায় আছেন, তার কোনও আপডেট দিচ্ছেন না। তার মানে কিছুটা স্বেচ্ছা নির্বাসনে।
তিনি বিরাট কোহলি। আর দশজনের সঙ্গে তাঁর মিল খুঁজতে যাবেন না। তিনি বাঁচেন নিজের শর্তে। তাঁর ইচ্ছে হলে, তিনি খেলবেন। তাঁর ইচ্ছে না হলে, তিনি খেলবেন না। তাঁর কি চোট? তিনি কি ছুটি কাটাতে বাইরে কোথাও গেছেন? তিনি কি ফের বাবা হতে চলেছেন? জল্পনা চলছেই। আর তিনি সেই জল্পনাকে দিব্যি জিইয়ে রেখেছেন।
আপনার মনে হতেই পারে, বিরাট কোহলি মানে কি আইনের ঊর্ধ্বে! অন্য কেউ হলে এতক্ষণ শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে হয়তো শাস্তি হয়ে যেত। নইলে অলিখিতভাবে ব্রাত্য হয়ে যেতেন। কিন্তু তাঁকে বাদ দেওয়াও যাবে না। যেদিন খেলতে চাইবেন, সসম্মানে দলে নিতে হবে। বলা যায়, তিনি যেটা চাইবেন, নির্বাচকদের সেই ইচ্ছেকেই মেনে নিতে হবে।
মাস চারেক পরেই তো টি২০ বিশ্বকাপ। আচ্ছা, তিনি কি খেলবেন? উত্তরটা কারও কাছেই স্পষ্ট নয়। ২০২২ টি২০ বিশ্বকাপের পর থেকেই এই ঘরানায় তাঁকে আর দেখা যাচ্ছে না। ভারত মূলত জুনিয়রদের নিয়েই দল গড়ছে। সেখানে বিরাট কোহলি বা রোহিত শর্মাদের দেখা যাচ্ছে না। অনেকে ধরেই নিয়েছিলেন, বিরাট–রোহিতদের বাদ দিয়েই ভারত হয়তো খেলতে নামবে।
কিন্তু গত কয়েক মাসে ছবিটা বোধ হয় একটু বদলেছে। যে বিরাট ফেলে আসা বছরে একটি টি২০ ম্যাচও খেলেননি, তাঁকে কিনা আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে খেলতে নামিয়ে দেওয়া হল! তার মানে, টি২০ বিশ্বকাপের ভাবনায় ফের কি তিনি ঢুকে পড়েছেন! আসলে, বিরাটের ট্রফি ক্যাবিনেটে টি২০ বিশ্বকাপ জয়ের কোনও মেডেল নেই। ধোনির নেতৃত্বে যেবার টি২০ বিশ্বকাপ এল, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আঙিনায় তখনও তাঁর পা পড়েনি। তারপর দীর্ঘদিন খেলেছেন, নিজে অধিনায়কও ছিলেন। কিন্তু অধরা মাধুরী আর ধরা দেয়নি।
যাই হোক, আবার সেই জল্পনায় ফেরা যাক। তিনি তাহলে কোথায়? বোর্ডই বা এমন ধোঁয়াশায় রেখেছে কেন? এর মাঝে এবি ডিভিলিয়ার্স দুম করে বলে বসলেন, বিরাট দ্বিতীয়বার বাবা হতে চলেছেন। বিরাট নিজেই নাকি তাঁকে জানিয়েছেন। দু’দিন যেতে না যেতেই মোক্ষম ডিগবাজি। বলা যায়, কান মুলে ভুল স্বীকার। মোদ্দা কথা, আমার এমনটা বলা উচিত হয়নি।
হঠাৎ, ডিভিলিয়ার্স এভাবে সুর বদল করতে গেলেন কেন? হতেই পারে, বিরাটের বাবা হওয়ার যে সম্ভাবনার কথা বলেছেন, সেটা ঠিক সত্যি নয়। অথবা, খবরটা সত্যি। কিন্তু ডিভিলিয়ার্স বাইরে ফাঁস করে দেওয়ায় বিরাট ক্ষুব্ধ। হয়তো বলেছেন, আমার ব্যক্তিগত জীবনের কথা তোমাকে বাহাদুরি করে কে বলতে বলেছে! আর বিরাট চটলে কী হতে পারে, বেশ ভালই বোঝেন আরসিবি–র সতীর্থ। হয়তো আইপিএলের আঙিনা থেকেই ছিটকে যাবেন।
কোনও সন্দেহ নেই, শচীন পরবর্তী যুগে স্টারডমের নিরিখে তিনিই এক নম্বরে। রান পান বা না পান, ফোকাস তাঁর দিকে। তিনি অধিনায়ক থাকুন বা না থাকুন, চর্চা সেই তাঁকে ঘিরেই। স্বদেশি হোন বা ভিনদেশি, বর্তমান হোন বা প্রাক্তন, তাঁর গুণগান গেয়ে যেতেই হবে। সে আপনার পছন্দ হোক বা না হোক। একটু বেসুরো গাইলেই ট্রোলবাহিনী আপনার জীবন ঝালাপালা করে দেবে। এই ব্যাপারে বিজেপির আইটি সেল আর বিরাটের ট্রোলবাহিনীর মধ্যে তেমন ফারাক নেই।
কিন্তু মুদ্রার একটা অন্য দিকও তো আছে। দেশের মাটিতে পাঁচটা টেস্ট। তার মানে প্রায় দশটা ইনিংস। এর মধ্যে দু–তিনটে সেঞ্চুরি আসতেই পারত। তার মানে, তিনি দুটো বা তিনটে সেঞ্চুরি হাতছাড়া করলেন। সর্বাধিক শতরানের রেকর্ড যিনি তাড়া করছেন, তার কাছে দু–তিনটে সেঞ্চুরি হাতছাড়া হওয়া মানে অনেকটাই পিছিয়ে যাওয়া। পরিবারের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে কজন পারতেন এভাবে হেলায় গোটা তিনেশ শতরান আর অন্তত ৫০০–৬০০ টেস্ট রানকে ফেলে আসতে!
আপনার পছন্দ হোক বা না হোক। মেজাজটাই যে আসল রাজা। তিনি বাঁচেন রাজার মতোই। তিনি বাঁচেন নিজের মর্জিতে।