(দিনটা ৩০ জানুয়ারি। এই দিনই গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধী। তার কয়েক মাস আগেই এসেছে স্বাধীনতা। সেই উৎসবের দিন কোথায় ছিলেন গান্ধীজি? তাই নিয়েই বিশেষ লেখা। লিখেছেন জগবন্ধু চ্যাটার্জি।)
ভারত যেদিন স্বাধীন হয়, সেদিন কোথায় ছিলেন গান্ধীজি? উত্তরটা হল, কলকাতায়। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে, বেলেঘাটায়।
লালকেল্লায় যখন স্বাধীনতার উৎসব হচ্ছে, গোটা দেশে যখন পতপত করে তেরঙা উড়ছে, তখন স্বেচ্ছা নির্বাসনে জাতির জনক। উৎসব আর কোলাহল থেকে অনেক দূরে। তিনি তখন দুই সম্প্রদায়কে আরও কাছাকাছি আনার সাধনায় মগ্ন।
দেশ বিভাজনের মধ্যে দিয়ে এসেছিল স্বাধীনতা। মন থেকে তা মেনে নিতে পারেননি গান্ধীজি। সেই যন্ত্রনার কথা দ্ব্যর্থহীনভাষাতেই বারবার বলেছেন। স্বাধীনতার আগের দিন, অর্থাৎ ১৪ আগস্ট কলকাতার মারওয়াড়ি ক্লাবে গান্ধিজি বলেছিলেন, ‘কাল ইংরেজ শাসনের হাত থেকে আমরা মুক্তি পাব। কাল থেকে আমরা স্বাধীন। কিন্তু আজ রাত থেকে আমার ভারত দু টুকরো হয়ে যাবে।’ তার কয়েকদিন আগে বলেছিলেন, ‘আমার দেশ আনন্দ করবে। আমি চাই, আপনারাও আনন্দ করুন। কিন্তু আমি সেই আনন্দযজ্ঞে সামিল হতে পারব না। কারণ, এমন স্বাধীনতা তো আমরা চাইনি। এই স্বাধীনতা আগামীদিনে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে বিভাজনের বীজ পুঁতে যাবে। এই অবস্থায় আমি কী করে মশাল জ্বালাতে পারি?’
দেশের নানাপ্রান্তে শুরু হয়ে গেল হিন্দু–মুসলিম দাঙ্গা। একদিকে নেতারা ক্ষমতার ভাগ বাটোয়ারায় মগ্ন। অন্যদিকে এক সম্প্রদায়ের হাতে মরছে আরেক সম্প্রদায়ের নীরিহ মানুষ। গান্ধীজি ১৩ আগস্ট এলেন বেলেঘাটায়। কারণ, এখানে দুই সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে মিলেমিশে আছে। গান্ধী এমন একটি জায়গা বেছে নিয়ে গোটা দেশকে এক সম্প্রীতির বার্তা দিতে চাইলেন। মাউন্টব্যাটেন বলেছিলেন, ‘পাঞ্জাবে দাঙ্গা চলছে। সেখানে দাঙ্গা থামাতে আমরা ৫৫ হাজার সৈন্য পাঠিয়েছি। বাংলায় শুধু একজন। ওয়ান ম্যান আর্মি। সেই মানুষটা একাই প্রাচীর হয়ে দাঙ্গা থামিয়ে দিয়েছে।’
পনেরোই আগস্ট সেই মানুষটা কোত্থাও যাননি। বেলেঘাটার গান্ধী আশ্রমে প্রার্থনা করে গেছেন আর একা একা চরকা কেটেছেন। না, সারাদিন কিছুই মুখে তোলেননি। উৎসব থেকে দূরে, একাকী এক সন্ন্যাসী।