জ্যোতিবাবু থাকলে ফেসবুক ছেড়ে মানুষের কাছেই যেতেন

প্রতাপ ভঞ্জ

দেখতে দেখতে পনেরো বছর হয়ে গেল। ২০১০ সালের এমনই একটি সকালে বিদায় নিয়েছিলেন জ্যোতি বসু। ১৭ জানুয়ারি তারিখটা অনেকেই ভুলে গিয়েছেন। এমনকি অন্যান্য বছর বামপন্থীদেরও মনে থাকে বলে মনে হয় না। মৃত্যুদিন তো দূরের কথা, জন্মদিনটাও বোধ হয় মনে থাকে না। ফেসবুকে দু–‌একজন ছবি আপলোড করেন। তা দেখে বাকিরা লাইক মেরে যান। যেন আর কিছুই করার নেই।

অথচ, অনেককিছুই করার থাকে। তাঁর স্মরণে বিভিন্ন এলাকায় কিছু অনুষ্ঠান করা যেত। না, নেতাদের ভাষণ নয়। গঠনমূলক কোনওকিছু। ধরা যাক, রক্তদান শিবির। এটা করতে গেলে নিশ্চয় তৃণমূল হামলা করত না। ওইদিন যদি পাড়ায় পাড়ায় সাফাই অভিযান করা যেত!‌ কোনও দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো যেত‌!‌ এই শীতের সময় যদি গরিব মানুষের হাতে শীতবস্ত্র বা কম্বল তুলে দেওয়া যেত!‌

এসব কোনও কিছুই ভাবেননি বাম নেতৃত্ব। তাঁরা মমতা ব্যানার্জিকে গালাগাল দিতে পারলেই খুশি। কখনও সারদা, কখনও রোজভ্যালি, কখনও শিক্ষা দুর্নীতি, কখনও রেশন দুর্নীতি— একের পর এক ইস্যুর অভাব নেই। কিন্তু শুধু অন্যকে গালমন্দ করলেই বুঝি দায় শেষ হয়ে যায়?‌ মানুষের আস্থা অর্জনের জন্য কী করা হচ্ছে?‌ তৃণমূল খুব খারাপ, তাই বলে আমরা কি খুব ভাল হয়ে গেলাম। এই আত্মসমীক্ষা কি হচ্ছে ?‌ হলেও খোলা চোখে তার প্রতিফলন তো দেখছি না।

এ বছর তবু নিউটাউনে বিশেষ অনুষ্ঠান রয়েছে। জ্যোতিবাবুর নামে রিসার্চ সেন্টারের শিলান্যাস। খুব ঘটা করেই অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। কিন্তু এতে মানুষের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া পড়বে বলে মনে হয় না। কারণ, কবে এই ভবন তৈরি হবে, সেই ভবন সাধারণ মানুষের কী কাজে আসবে, সংশয় থেকেই যায়। তার বদলে জেলায় জেলায় (‌সম্ভব হলে মহকুমা স্তরে)‌ যদি স্বল্পখরচে চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা যায়, স্বল্প খরচে ডাক্তারি পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থা করা যায়, সেটা অনেক বেশি কার্যকরী হবে।

ফেসবুকে সারাক্ষণ মগ্ন থেকে, নিজেদের কর্মসূচির ছবি পোস্ট করে, পা পছন্দের পোস্টে লাইক দিয়ে একটা আত্মশ্লাঘা হতে পারে। তাতে কাজের কাজ কিছুই হবে না। যদি সত্যিই জ্যোতিবাবুর প্রতি শ্রদ্ধা থাকে, তবে মানুষের কাছে যান। কেন মানুষের বিশ্বাস হারিয়েছিল, সেই কারণগুলো খুঁজে বের করুন। সম্ভব হলে শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করুন। দেখবেন, তখন আর তৃণমূলকে গালাগাল দেওয়ার দরকার পড়ছে না।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.