স্বরূপ গোস্বামী
মহুয়া মৈত্রকে কী শাস্তি দেওয়া হবে? অনেক আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়াই ছিল। লোকসভায় যেটা হল, তা নিছকই আনুষ্ঠানিকতা। আরও একবার নিজেকে কলঙ্কিত করল লোকসভা।
আচ্ছা, মহুয়া মৈত্রর অপরাধটা কী? অর্থ নিয়ে প্রশ্ন করা! খোদ এথিক্স কমিটির দীর্ঘ রিপোর্টে এমন কোনও প্রমাণের কথা উল্লেখ নেই। লেখা হয়েছে, এই নিয়ে তদন্তের প্রয়োজন। অথচ, কী অবলীলায় তাঁরা সংসদ থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করে দিল।
লগ ইন আইডি ও পাসওয়ার্ড নাকি অন্য ব্যক্তিকে দিয়েছেন। এটা অবশ্য মহুয়া নিজেও অস্বীকার করেননি। কিন্তু লগ ইন আইডি অন্য কাউকে দেওয়া যাবে না, এই মর্মে কোনও আইন বা নির্দেশাবলি কি ছিল! নিশ্চিতভাবেই ছিল না। থাকলে, দিন পনেরো আগে আবার নির্দেশিকা জারি করতে হত না।
তাছাড়া, একটু ভাল করে খোঁজ নিলে দেখা যাবে, অন্তত অর্ধেক সাংসদের হয়ে অন্যরাই লগ ইন করেছেন। এমনকী প্রধানমন্ত্রীর হয়ে যে টুইট করা হয়, সেগুলো তাঁর করা! চেয়ারের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলতে হয়, এতখানি ইংরাজি লেখার মতো বিদ্যেবুদ্ধি তাঁর নেই।
লোকসভার স্পিকারের নামে যে সব বিজ্ঞপ্তি জারি হয়, সেগুলো তাঁর লেখা! হতেই পারে না। সংসদে তাঁর আচরণ থেকেই বোঝা যায়, তাঁর ইংরাজির দৌড় কতটুকু। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে যদিও বা একলাইন বলার চেষ্টা করেন, দু লাইন যেতে না যেতেই হিন্দিতে ফিরে আসতে হয়।
এথিক্স কমিটির চেয়ারম্যান। সবমিলিয়ে প্রায় পাঁচশো পাতার রিপোর্ট দাখিল করেছেন। লেখা তো দূরের কথা। এক পাতা ঠিকঠাক রিডিং পড়তে পারবেন?
তাহলে, এঁদের লগ ইন আইডি কার কাছে থাকে? এঁদের হয়ে কে লিখে দেন?
ধরেই নিলাম, মহুয়া লগ ইন আইডি দিয়ে অন্যায় করেছেন। এর জন্য তাঁকে সতর্ক করা যেত। দরকার হলে ভর্ৎসনা করা যেত। তার বদলে একেবারে সাংসদপদ খারিজ!
সংসদে রিপোর্ট পেশ হল দুপুর বারোটায়। দুটোর অধিবেশনে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে গেল। স্পিকার নিজে পড়েছেন? ক’পাতা পড়েছেন? রিপোর্ট না পড়ে এতবড় সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়! হ্যাঁ যায়। যদি আগে থেকেই ঠিক থাকে, তবে যায়। যদি ওপরওয়ালার হুকুম থাকে, তবে যায়।
নিজেকে আর কত লজ্জিত করবে এই সংসদ!
মহুয়া লগ ইন আইডি দিলেন বলে নাকি জাতীয় নিরাপত্তা সঙ্কটের মধ্যে পড়ে গেল। জাতীয় নিরাপত্তা ও সুরক্ষা যে এই সরকারের আমলে এতখানি ঠুনকো হয়ে পড়েছে, তা সত্যিই জানা ছিল না।
এথিক্স কমিটির চেয়ারম্যান পার্লামেন্টে রিপোর্ট জমা দিলেন না। তার আগে তা আদানির টিভি চ্যানেলে ফলাও করে প্রচার করা হল। এই গোপন রিপোর্ট আদানির চ্যানেলের হাতে গেল কীভাবে? তদন্ত করার হিম্মৎ আছে? স্পিকারের হাতে আসার আগে এথিক্স কমিটির রিপোর্ট আদানির চ্যানেলের হাতে পৌঁছে যায়। জাতীয় সুরক্ষা সত্যিই বিপন্ন। আকাট মূর্খদের হাতে দেশ চালানোর ভার দিলে যা হয়, ঠিক তাই হয়েছে।
মহুয়া বলেছিলেন, তাঁর বস্ত্রহরণ করার চেষ্টা।
না, বস্ত্রহরণ তাঁর হয়নি। লোকসভার দণ্ডমুণ্ডের কর্তারা নিজেরাই নিজেদের উলঙ্গ করে ফেললেন।