ভাঁড়ামো ছাড়া মোহন সচিব কি আর কিছুই বোঝেন না!‌

অজয় নন্দী

নিত্য নতুন বায়নায় মোহনবাগান সচিবের কোনও জুড়ি নেই। সেই বায়না কতটা হাস্যকর, সেদিকে কোনও ভ্রুক্ষেপই থাকে না। যেভাবেই হোক, খবরে থাকতে হবে। টিভিতে মুখ দেখাতে হবে। কাগজে নাম ছাপাতে হবে। তার জন্য মোহনবাগান হাস্যকর হল কিনা, এসব ভেবেও দেখেন না।

এক একটা চেয়ারের একেকটা ওজন আছে। অনেকেই সেই চেয়ারের মূল্য বোঝেন না। সেই চেয়ারের ওজন বোঝেন না। মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত তেমনই একজন প্রচারসর্বস্ব কর্তা। আগে যেমন সস্তা নাটক করতেন, এখনও সেই সস্তা নাটকই চালিয়ে যান। এমনিতেই কলকাতা লিগের জৌলুস এখন অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। এর পেছনে আইএফএ–‌র যত না দায়, মোহনবাগান–‌ইস্টবেঙ্গলের দায় কোনও অংশে কম নয়। তাঁরা এমন হাবভাব করেন, যেন কলকাতা লিগ বা আইএফএ শিল্ডটা কোনও টুর্নামেন্টই নয়। এগুলো খেললে তাদের বিরাট সম্মানহানি হয়ে যাবে। তাই কখনও দল নামায় না। আবার কখনও দ্বিতীয় শ্রেণির দলকে খেলিয়ে দেয়।

যথারীতি, এবারও দুই প্রধান লিগে আনকোরা দলকেই খেলিয়েছে। ফল যা হওয়ার, তাই হয়েছে। তাদের চোখের সামনে ড্যাং ড্যাং করে মহমেডান লিগ জিতেছে। কিন্তু একমাস পেরিয়ে যাওয়ার পরেও সেই লিগ শেষ করা যায়নি। নানা বাহানায় শেষের ম্যাচগুলো খেলতে চাইছে না মোহনবাগান। বারবার বায়না তুলছে, তারিখ পেছোতে হবে।

কিন্তু তারিখ পেছোনোরও তো একটা সীমা আছে। সেই পুজোর আগে মহমেডান লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে বসে আছে। কিন্তু তাদের পুরস্কার দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, লিগ শেষ না করে সেই ট্রফি দেওয়া যায় না। সেই সুযোগটাই নিতে চাইছে মোহনবাগান। নৈহাটিতে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ম্যাচ। অথচ, তারা দলই পাঠাল না। উল্টে আইএফএ–‌কে নানারকম হুমকি দিয়ে গেল। সচিব কখনও বলে বসলেন, আইএফএ একবার শাস্তি দিয়ে দেখুক। আমাদের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা নেই। কখনও বললেন, আমরা আইএফএ–‌র নথিভুক্ত থাকব না। দরকার হলে ওড়িশা, ঝাড়খণ্ডের আন্ডারে খেলব। ভাগ্যিস বলেননি, উয়েফার অধীনে খেলব।

সোজা কথা, লিগ দ্রুত শেষ করতে হবে। মোহনবাগানকে তার জন্য ঢের সময় দেওয়া হয়েছে। এরপরও যদি দল নামাতে না পারে, সেটা নিতান্তই মোহনবাগান কর্তাদের অপদার্থতা। এর জন্য কোথায় লজ্জিত হবেন, তার বদলে কিনা গড়া চড়াচ্ছেন, হুমকি দিয়ে চলেছেন।

ধন্যবাদ আইএফএ সচিবকে। তিনি অন্তত চেয়ারের মর্যাদা বজায় রেখেছেন। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, অনেক সময় দেওয়া হয়েছে। এই লিগ অনন্ত সময় ধরে ঝুলিয়ে রাখা সম্ভব নয়। হ্যাঁ, এই সহজ সত্যিটা স্পষ্ট করে বলাটা জরুরি ছিল। সেটা অন্তত বলতে পেরেছেন।

মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে, মোহনবাগান সচিব দিনের পর দিন এই জাতীয় সস্তা নাটক আর ভাঁড়ামি করে যাচ্ছেন কীসের ভরসায়?‌ আসলে, স্বভাব। বহুকালের পুরনো স্বভাব। খবরে থাকার জন্য একেবারে নীচুস্তরের ভাঁড়ামি করতেও এঁদের আটকায় না। কেউ ইচ্ছে করলে নিজে ভাঁড় হতেই পারেন। কিন্তু মোহনবাগান সচিবের চেয়ারে বসে যে এমন ভাঁড়ামি করা যায় না, এটা বলার মতো ক্লাবে কেউ নেই!‌ পাশে পেয়েছেন আরেক ভাঁড়কে। যিনি শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রীর ভাই হওয়ার সুবাদে মোহনবাগানের মতো ক্লাবের ফুটবল সচিব হয়ে বসে আছেন। একসময় যে ফুটবল সচিব ছিলেন শৈলেন মান্না, এমনকী কয়েক বছর আগেও যে চেয়ারে বসতেন সত্যজিৎ চ্যাটার্জি, সেই চেয়ারে আজ বাবুন ব্যানার্জি। আসলে, এই বাবুন ব্যানার্জিদের ফুটবল সচিব না করলে দেবাশিসবাবুরা যে সচিব থাকবেন না।

দোষটা একা তাঁদের নয়। আসলে, মূলস্রোত মিডিয়াও বড় বেশি অসহায়। দন্ত বিগলিত করা রিপোর্টারকূলে ছেয়ে গেছে ময়দান। সচিবও হ্যাংলার মতো সেলফি তোলেন। রিপোর্টারাও সমগোত্রীয়। বলিষ্ঠ কলম হাতে একটা ধীমান দত্ত আজ সত্যিই বড় দরকার ছিল। তাঁর কলমই এই প্রশ্নটা তুলতে পারত, রাজা তোর কাপড় কোথায়!‌

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.