ধীমান সাহা
শিল্প সম্মেলনে খুঁজছিলাম একজনকে। দর্শন হিরানন্দানি।
খুঁজছিলাম আরও একজনকে। মহুয়া মৈত্র।
নাহ। কাউকেই দেখা গেল না। ত্রিসীমানাতেও দেখা গেল না।
হঠাৎ, এই দুজনকে খোঁজা কেন? আরও এত এত শিল্পপতি আছেন। এত এত প্রতিশ্রুতি আছে। এত এত মন্ত্রী–আমলা আছেন। কিন্তু তারপরেও আসল দুজনই যেন নেই। কী আশ্চর্য, মিডিয়ায় এই নিয়ে চর্চাও নেই।
আচ্ছা, দুবাইয়ের যে শিল্পপতির সঙ্গে মহুয়ার সম্পর্ক নিয়ে এত জলঘোলা, তাঁদের আলাপটা কোথায়? এই শিল্প সম্মেলনেই। তখনও মহুয়া সাংসদ হননি। করিমপুর থেকে নির্বাচিত দলের একজন বিধায়ক। সেবার শিল্প সম্মেলনে মহুয়ার ওপর একটি বিশেষ দায়িত্ব ছিল। মহুয়া শিক্ষিতা, বুদ্ধিমতী। দারুণ ইংরাজি বলেন। কর্পোরেট জগতে দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন। কর্পোরেটদের সঙ্গে মেলামেশায় দারুণ স্বচ্ছন্দ। সেই কারণেই মহুয়ার ওপর বিশেষ দায়িত্ব ছিল এই শিল্পপতিদের বিমানবন্দর থেকে হোটেলে আনা। হোটেল থেকে শিল্প সম্মেলনে আনা। কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা, তার তদারকি করা।
এই করতে গিয়েই মহুয়াকে ভাল লাগে দর্শনের। মহুয়ার মনেও দর্শন নিশ্চয় কোথাও একটা ছাপ ফেলেছিলেন। সম্মেলন শেষ হল। অনেক বড় বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি হল। দুজনের ফোন নম্বর বিনিময় হল। কথা হল। সেই কথা আপন নিয়মে এগোতে থাকল। মহুয়াও পৌঁছে গেলেন দুবাই।
এরই মাঝে মহুয়া সাংসদও হয়ে গেছেন। দিল্লিতে প্রভাবশালী। অর্থাৎ, দর্শন যদি শিল্পপতি হন, মহুয়াও ফেলনা নন। দেশের প্রথমসারির ডাকাবুকো এক সাংসদ। এক ডাকে গোটা পার্লামেন্ট চেনে। যাঁরা রাজনীতির খোঁজখবর রাখেন, তাঁদের অধিকাংশই নামটার সঙ্গে পরিচিত। হ্যাঁ, মাত্র কয়েক বছরে এভাবেই ছাপ ফেলেছিলেন মহুয়া।
তারপর যা হয়। তাঁর লগ ইন আইডি দুবাইয়ে শেয়ার হয়েছে। সেখান থেকে পার্লামেন্টে প্রশ্ন এসেছে। এমন অভিযোগে তোলপাড় হল দেশ। নেত্রী বা দল আপাতভাবে পাশে দাঁড়ালেও বুঝিয়ে দেওয়া হল, তাঁর লড়াই নিজেকেই লড়তে হবে।
মহুয়ার প্রতি নেত্রীর রাগের কারণটা কী? সেই শিল্প সম্মেলন। ব্যাটা, আমার এখানে এল। খেল–ঘুরল। বিনিয়োগ করব বলে গেল। অথচ, কিছুই করল না! উল্টে মহুয়ার জন্য বিনিয়োগ করে ফেলল! মহুয়াও তেমনি। তোমাকে দায়িত্ব দিলাম ওদের দেখভালের। রাজ্যের ভাল দিকগুলো তুলে ধরার। তার বদলে নিজের ভাল দিকগুলো তুলে ধরে দুবাই চলে গেল! সেই শিল্পপতির বিশেষ বন্ধু হয়ে গেল!
তাই মহুয়া, তোমাকে কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করে দিলাম। লোকে ভাবল প্রোমোশন। আসলে, বুঝিয়ে দিলাম, জাতীয় নেত্রী তো দূরের কথা, তুমি রাজ্য নেত্রীও নও। তোমাকে বড়জোর জেলার নেত্রী বলা যেতে পারে। কী জানি, আবার কার সঙ্গে আলাপ হবে! আবার কোনও বিশেষ বন্ধু জুটিয়ে ফেলবে। অতএব, তুমি আর শিল্প সম্মেলনের ছায়া মাড়িও না।
কেন মহুয়াকে দেখা গেল না, এবার বোঝা গেল!