কে কপিলদেব!‌

স্বরূপ গোস্বামী

এক লাখ বত্রিশ হাজারের স্টেডিয়াম বলে কথা। বিশ্বকাপের ফাইনাল বলে কথা। তার ওপর আসছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এত এতে সেলিব্রিটি আসছে। এত নাচা–‌গানার আয়োজন। জাঁকজমক তো হবেই।

কিন্তু এত আয়োজনের মধ্যে তিনি কই!‌ তিনি মানে, কপিলদেব। যাঁর নেতৃত্বে তিরাশিতে প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছিল ভারত। তিনি কি অন্য কাজে ব্যস্ত!‌ আসতে পারেননি?‌

আচ্ছা, ২০১১ তে ভারত আরও একবার বিশ্বকাপ জিতেছিল না!‌ সেই দলের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিকেও তো কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!‌ তিনিই বা কোথায়!‌

না কপিলদেব, না ধোনি। কাউকেই পাওয়া গেল না মোতেরার গ্যালারিতে। এই যা!‌ মোতেরার নামটাই তো বদলে গেছে। এই স্টেডিয়ামের নাম তো এখন নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম।

আসলে, কপিলদেব বা এম এস ধোনি, তাঁদের আমন্ত্রণ জানানোই হয়নি। কী জানি, বোর্ড সচিব জয় শাহ হয়তো বলে বসতে পারেন, কে কপিলদেব!‌ যে অর্বাচীনদের হাতে বোর্ড চলে গেছে, তাতে এমনটা বললেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।

বিশ্বকাপের উদ্বোধনও হয়েছিল এই আমেদাবাদেই। সেদিনও ডাক পড়েনি কিংবদন্তি কপিলদেবের। সময় কোথায়!‌ এত এত সেলিব্রিটি আসবেন। তাঁদের হাতে টিকিট তুলে দিতে হবে। সেখানে কে কপিলদেব?‌

ফাইনালের আগে ঘটা করে জানানো হল, বিভিন্ন দেশের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। তাঁদের জন্য বিশেষ ব্লেজার তুলে দেওয়া হবে। ভিনদেশি অধিনায়ক তো দূরের কথা। নিজের দেশের দুই বিশ্বজয়ী অধিনায়কের কাছেই কিনা আমন্ত্রণ পৌঁছল না!‌

অনেক যন্ত্রণা নিয়ে কপিলদেব বলেছেন, ‘‌অনেক সেলিব্রিটি আসবে। ওরা হয়তো তাঁদের আপ্যায়ন নিয়ে ব্যস্ত। তাই হয়তো আমাকে ফোন করতে ভুলে গেছে।’‌

ভাবতে অবাক লাগে, এই আমাদের ভারতবর্ষ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাকালফল পুত্র যদি বোর্ডের হর্তাকর্তা বিধাতা হয়ে ওঠেন, তবে এটাই হয়তো প্রত্যাশিত। কত যন্ত্রণা থেকে কপিদদেবকে এমন কথা বলতে হয়!‌ অথচ, তারপরও আমরা কেমন নিরুত্তর। আমরা কেমন উদাসীন!‌

আচ্ছা, এই বোর্ডের সভাপতি যেন কে?‌ রজার বিনি। তিনিও তো তিরাশির বিশ্বজয়ী দলের সদস্য। তাঁরও একবার কপিলের নামটা মনে পড়ল না!‌ নাকি কপিলদে আমন্ত্রণ জানাতে গেলেও বোর্ড সচিবের পার্মিশন নিতে হবে!‌ পাচ্ছে, কপিলকে আমন্ত্রণের কথা বললে বোর্ডসচিব ক্ষেপে যান!‌ এমন আতঙ্ক কাজ করেনি তো?‌

দেশের একঝাঁক প্রাক্তন ক্রীড়াবিদ। তাঁদেরও মনে হল না, এটা ঘোরতর অন্যায়!‌ জোরালো প্রতিবাদ না হোক, একটা মৃদু টুইটও করা যেত না!‌ এত এত চ্যানেল। যাঁরা সন্ধে থেকে চিৎকার করতে শুরু করে দেন। তাঁদের প্রাইম টাইমে এসব নিয়ে কোনও শো হয় না!‌ কেউ এক লাইন উচ্চারণও করেন না!‌ অথচ, এঁরাই দেশপ্রেমের ধ্বজা তুলে ধেই ধেই করে নাচতে থাকেন। ফাইনালে জিতলে এরাই তারস্বরে দেশপ্রেমের ফোয়ারা ছোটাতেন। ভাগ্যিস, এঁদের দেশপ্রেমের খ্যামটা নাচ দেখতে হয়নি।

দেশের বিশ্বজয়ী অধিনায়ক আমন্ত্রণ পাননি। এরপরেও যাঁরা সোচ্চার হতে পারেন না, ধিক্কার তাঁদের ‘‌দেশপ্রেম’‌কে। এই ভারতের বিশ্বকাপ জেতার কোনও অধিকার নেই।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.