নির্মল দত্ত
তারিখ পে তারিখ। কথাটা খুব প্রচলিত। কোনও একটি হিন্দি ছবিতে প্রথম ব্যবহার হয়েছিল। তারপর যেন প্রবাদের চেহারা নিয়েছে।
মূলত আদালতের দীর্ঘসূত্রিতা বোঝাতেই এই প্রবাদের ব্যবহার। জমে থাকা মামলার পাহাড়। বিচারপতি কম। এমন কারণ দেখানো হয়।
শুধু কি আদালতই ঝোলায়! তদন্তকারি সংস্থা? তারা কি শীতঘুমে চলে যায় না? সিবিআই কোনও তদন্তের দায়িত্ব নিলেই মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া যায়, এই মামলার কোনও পরিণতি হবে না। শুরুতে দু একজন ধরপাকড় হয়। এক–দু বছর বিনা বিচারে জেল খাটতে হয়। তারপর সময়মতো চার্জশিটও হয় না। চার্জশিট হলেও নেহাতই দায়সারা। পরের দিকে আর জেরাও হয় না। আপন নিয়মেই সেই ধৃত ব্যক্তি জামিন পেয়ে যায়। আর তদন্তও শীতঘুমে চলে যায়।
সত্যিই কি সিবিআই–এর দক্ষতা নেই? চাইলে কি তারা কিনারা করতে পারে না? এমনটা কেউই বিশ্বাস করবে না। হ্যাঁ, সিবিআই চাইলে অবশ্যই পারে। এটুকু দক্ষতা তাদের আছে। কিন্তু তারপরেও সব কেসে তারা ডাঁহা ফেল করে কেন? অধিকাংশ মামলার কিনারা হয় না কেন?
এর জন্য আদালতও দায় এড়াতে পারে না। আদালত তদন্তের দায় দিয়েই খালাস। তারপর সেই তদন্তের কী গতিপ্রকৃতি, সেদিকে আর তাঁদের নজর থাকে না। তাই তদন্তের নামে বছরের পর বছর প্রহসন চলতেই থাকে। সিবিআই কর্তারাও ভাল করে জানেন, আদালত শাস্তি দেওয়া তো দূরের কথা, ভর্ৎসনাটুকুও করতে পারবে না। কারণ, দীর্ঘসূত্রিতার সবথেকে বড় অভিযোগ খোদ আদালতের বিরুদ্ধে।
কখনও অভিজিৎ গাঙ্গুলি, কখনও অমৃতা সিনহা। এই দুই বিচারপতি লাগাতার তাড়া দিয়ে গেছেন। মাঝে মাঝেই সিবিআই–ইডিকে ভর্ৎসনা করেছেন। কিন্তু সেই অভিযুক্তরাই কখনও ডিভিশন বেঞ্চে, কখনও সুপ্রিম কোর্টে ছুটেছেন। অনেক সময়ই রক্ষাকবচ নিয়ে এসেছেন। আসলে, একজন বিচারপতি তাগাদা দিলেও সেই গতি রুদ্ধ করে দেওয়ার জন্যও অনেকেই সক্রিয় ছিলেন।
অবশেষে, সুপ্রিম কোর্টের এই রায় কিছুটা হলেও আশার আলো দেখাল। প্রথমত, সুপ্রিম কোর্ট নিয়োগ দুর্নীতির মামলা আবার হাইকোর্টে ফিরিয়ে দিল। দ্বিতীয়ত, দু মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দিল। তৃতীয়ত, ছমাসের মধ্যে বিচারপ্রক্রিয়া শেষের নির্দেশ দেওয়া হল।
সত্যিই যুগান্তকারী এক রায়। স্বাগত জানাতেই হয়। বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধা সবে শুরু। সুপ্রিম কোর্ট এভাবেই সক্রিয় ভূমিকা পালন করুক।