ক্যামেরা না থাকলেই বোঝা যাবে কে কতটা দেশপ্রেমী

অজয় নন্দী

একটা টিকিটের জন্য কতই না হাহাকার। যে যাকে পারছেন ফোন করছেন, একটা টিকিটের ব্যবস্থা করা যাবে!‌ আসলে, কেউই জানেন না, কোথা থেকে কীভাবে টিকিট পাওয়া যাবে!‌ তাই সব দরজাতেই কড়া নেড়ে রাখছেন। যদি কোনও দরজা খুলে যায়। ৯০০ টাকার টিকিট কেউ কেউ পাঁচ হাজার দিয়েও কিনতে চাইছেন। এমন আবহ তৈরি হলে ব্ল্যাকারদের পোয়াবারো। এখন ব্ল্যাকারদের চেহারাও কেমন বদলে গেছে। ময়দানের বটতলার চেনা ব্ল্যাকার নয়, এখন যেন কর্পোরেট ব্ল্যাকার। তাদের হাত আবার অনেক লম্বা।

কিন্তু টিকিটের এত হাহাকার কেন?‌ আমরা সবাই কি দারুণ ক্রিকেট ভালবাসি?‌ নাকি ওইদিন ইডেনে না গেলে কলার তুলে ঘোরা যাবে না!‌ নাকি ওই দিনের ছবি পোস্ট করে নিজের দর বাড়ানোর চেষ্টা। ভারত–‌দক্ষিণ আফ্রিকার আগেও ইডেনে দুখানা ম্যাচ হয়ে গেল। আমরা কজন মাঠে গেছি!‌ টিভিতে দেখা গেল, গোটা মাঠই ফাঁকা। এতটাই ফাঁকা যা ইডেনকে লজ্জায় ফেলে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। সেদিন কেউ কাউকে টিকিটের জন্য ফোন করেছিলেন!‌ এমনকী সেদিন যদি ফ্রিতেও টিকিট দেওয়া হত, তাহলেও বোধ হয় তার থেকে বেশি লোক হত না। কারণ, ভিনদেশিদের ক্রিকেট দেখতে আটঘণ্টা কে নষ্ট করবে!‌ তখন আমাদের তথাকথিত ‘‌ক্রিকেটপ্রেম’‌ কোথায় যে উড়ে যায়!‌

এই ইডেনেই একটি সেমিফাইনাল রয়েছে। যদি ভারত খেলে, তাহলে চাহিদা চরমে পৌঁছবে। এখন যা, তার থেকেও ঢের বেশি। কিন্তু যদি ভারতের খেলা ইডেনে না পড়ে, তাহলে ইডেন হয়ত অর্ধেকও ভরবে না। হলই না হয় বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল। অথচ, সাতাশির কথা ভাবুন। সেমিফাইনালে ভারত ছিটকে গেছে। খেলা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া বনাম ইংল্যান্ড। তারপরেও কানায় কানায় ভর্তি ছিল একলাখি ইডেন। আসলে, সেটা ছিল ক্রিকেটপ্রেম। সেটা ছিল পাউরুটি, ঘুগনি আর ডিম সেদ্ধর ইডেন। কমলালেবু আর চিনেবাদামের ইডেন। যে যাই বলুন, সেই ইডেন আর নেই। তাই এখন যেটা হয়, সেখানে ক্রিকেটপ্রেম থাকে না, দেশপ্রেমও থাকে না। থাকে হুজুগ। থাকে নিজেকে সেলিব্রিটি হিসেবে জাহিরের চেষ্টা। আইসিসি একবার শুধু বলে দিক, মোবাইল বা ক্যামেরা নিয়ে ঢোকা যাবে না। দেখুন এই হুজুগ কোথায় উড়ে যাবে। ইডেন অর্ধেকও হয়ত ভরবে না। দেখুন তখন ‘‌ক্রিকেটপ্রেম’ বা ‘‌দেশপ্রেম’‌ কোথায় থাকে!‌‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.