আসল সময়ে হারতে হবে না তো!‌

কুন্তল আচার্য

কোনও দল যখন সব ম্যাচ জিততে শুরু করে, তখন আশার চেয়ে আশঙ্কাই বেশি হয়। নিজের দল হলে তো কথাই নেই।

এই বিশ্বকাপে অপরাজিত অবস্থায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড র‌য়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়ার। কিন্তু সেগুলো ব্যতিক্রমী ঘটনা হিসেবে ধরাই ভাল। যত শক্তিশালী দলই হোক, তাকে কখনও না কখনও হারতেই হয়। সেটা গ্রুপ লিগে হয়ে গেলে, একদিক দিয়ে ভালই হয়।

যেমন, তিরাশিতে ভারত চ্যাম্পিয়ন হলেও গ্রুপ লিগে সম্ভবত দুটো ম্যাচে হেরেছিল। আমরা সেই হারগুলোকে মনে রাখিনি। মনে রেখেছি চ্যাম্পিয়ন হওয়াটাকেই। আবার উল্টো ঘটনাও আছে। সব ম্যাচ জিতে কোনও দল সেমিফাইনালে গেল। কিন্তু সেমিফাইনালে বা ফাইনালে গিয়ে হেরে গেল। এমন উদাহরণ অনেক বেশি। নিউজিল্যান্ড বা দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রে এমনটা বারবার ঘটে। সেই কারণেই এই দলগুলিকে ‘‌চোকার্স’‌ বলা হয়।
এবার ভারত একের পর এক ম্যাচ জিতেই চলেছে। এই লেখা যখন লিখছি, তখন সাতে সাত করে ফেলেছে। শেষ চারে যাওয়া ভারতের আগেই একরকম নিশ্চিত ছিল। তবু যেটুকু অনিশ্চয়তা, মুম্বইয়ে জয়ের পর সেটুকুও থাকল না। কিন্তু একটা আশঙ্কা থেকেই যায়। ‘‌ল অফ অ্যাভারেজ’‌ নামক কথাটা যেন সিঁদুরে মেঘের মতোই উঁকি দেয়। এই যে অশ্বমেধের ঘোড়া ছুটে চলেছে, আসল সময়ে তার গতি রুদ্ধ হয়ে যাবে না তো!‌

অস্ট্রেলিয়া পেশাদার দল। তারা হয়ত এই চাপ নিতে পারে। আসল সময়ে তারা ঠিক গর্জে ওঠে। কিন্তু ভারত সম্পর্কে এখনও সেই বিশ্বাসটা রাখা কঠিন। সারা টুর্নামেন্টে দারুণ খেলেও আসল সময়ে নিজেদের ঠিকঠাক মেলে ধরতে না পারার ‘‌সুনাম’ ভারতের রয়েছে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের কথাই ধরুন। সারা বছর দাপট নিয়ে খেলে ফাইনালে ওঠার পর সেখানে শোচনীয় হার। পরপর দু’‌বার এমনটা ঘটল। ভারতের তারকার অভাব নেই। যেদিন খেলবেন, সেদিন সবাই খেলবেন। আর যেদিন ব্যর্থতা আসবে, সেদিন দেখা গেল, কেউই হয়ত দাঁড়াতে পারলেন না।
ঘরের মাঠে খেলা অবশ্যই একটা বাড়তি মোটিভেশন। কিন্তু এত এত মানুষের চিৎকার কখনও কখনও চাপেও ফেলে দেয়। আপনি একা দাঁড়িয়ে আছেন। গ্যালারিতে এক লক্ষ মানুষ চিৎকার করছেন। এই অবস্থায় স্নায়ু ধরে রাখাটাও খুব সহজ ব্যাপার নয়। যাঁরা ওই মাঠের মাঝে গিয়ে দাঁড়ান, তাঁরাই বোঝেন। এত এত মানুষ আমার সঙ্গে আছেন, এটা যেমন একটা অনুভূতি, তেমনই আমি একটু ব্যর্থ হলেই এত এত মানুষের চোখে ভিলেন হয়ে যাব, এটাও আরেক ধরনের অনুভূতি। দুটো অনুভূতিই সমান সত্যি।

‌স্নেহের স্বভাবই এমন, অকারণ অনিষ্টের আশঙ্কা করে। আমরা নিজের দেশকে ভালবাসি। আমরা চাই, ভারত বিশ্বজয়ী হয়ে উঠুক। হয়ত সেই কারণেই নিজের দেশকে নিয়ে দুশ্চিন্তাও হয়।

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.