তবু তৃণমূলেই থাকতে হবে, এটাই মহুয়ার সবথেকে বড় বিড়ম্বনা

রক্তিম মিত্র

চারপাশে এমন একটা হাওয়া তোলা হচ্ছে, যেন মহুয়া মৈত্র বিরাট কোনও অপরাধ করে ফেলেছেন। যেন তাঁর জন্যই জাতীয় নিরাপত্তা বিরাট এক প্রশ্নের মুখে এসে পড়েছে। তড়িঘড়ি বসে গেল এথিক্স কমিটি। যে এথিক্স কমিটি নারদা কাণ্ডের পর শীতঘুমে চলে গিয়েছিল, সে হঠাৎ করে জেগে উঠল।

আসলে, আঁতে ঘা লাগলে এমনটাই হয়। আদানি নিয়ে প্রশ্ন!‌ সরকারকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা!‌ দাঁড়াও, তোমার ব্যবস্থা হচ্ছে। আসলে, একজন দক্ষ ও কার্যকরী সাংসদ কী করতে পারেন, শাসককে কতটা দুশ্চিন্তায় ফেলতে পারেন, এই চার বছরে সেটা বেশ ভালভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন কৃষ্ণনগরের এই সাংসদ।

আসলে, সংসদটা দিন দিন হল্লাবাজির আখড়া হয়ে উঠছে। এমন এমন লোক এখানে ঢুকে পড়ছেন, যাঁদের দর্শক হিসেবে গ্যালারিতে বসার যোগ্যতাও নেই। মিমি, নুসরতদের মতো সাংসদ থাকলেই শাসকের সুবিধা। তাঁরা সেজেগুজে আসবেন। সেলফি তুলবেন। একজন সাংসদের কী কাজ, কোনওদিন বুঝবেনও না। আবার যাঁরা এইসব লোকেদের সংসদে পাঠায়, তারাও বোধ হয় চায় না সাংসদ খুব বেশি সক্রিয় হয়ে উঠুক।

আসলে, মহুয়া কি শুধু বিজেপির রোশের শিকার?‌ সংসদে তৃণমূলের যাঁরা বলিয়ে–‌কইয়ে, সেই সৌগত রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বা কল্যাণ ব্যানার্জিরা কি অস্তিত্বের সংকটে ভুগছেন না?‌ আর যাঁরা হাত তোলা পার্টি, তাঁরা তো ঈর্ষা করবেনই। সর্বভারতীয় মিডিয়ায় মহুয়ার এতখানি নাম ছড়িয়ে পড়ায় স্বয়ং নেত্রীই কি খুশি?‌ নিশ্চিতভাবেই না। অর্থাৎ, মহুয়ার গোপন শত্রু তাঁর ঘরের মধ্যেই। তাই মহুয়া বিপাকে পড়ায় তাঁরাও কম উল্লসিত নন।

আসলে, মহুয়া চাকে ঢিল মেরেছেন। সেই চাক হল আদানি। কিন্তু এতে শুধু মোদি রুষ্ট হবেন, এমন নয়। তাঁর দলনেত্রীও রুষ্ট হবেন। এই রাজ্যে সমুদ্র বন্দরই হোক বা দেউচা–‌পাচামি। বিনিয়োগের জন্য সরকার চেয়ে আছে সেই আদানির দিকেই। কেন্দ্র যেমন পোর্ট, বিমান বন্দর, রেল দিয়ে বসে আছে, রাজ্যও গোপনে অনেক জমি বেনামে দিয়ে বসে আছে। পাইপলাইনের তলায় আর কী কী প্রকল্প আছে, কে জানে!‌ কত জঙ্গল, কত হাজার হাজার একর জমি বেনামে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, কে জানে!‌

তাই মহুয়া বড়ই নিঃসঙ্গ। নিজের দলকেও সঙ্গে পাবেন না। এবার কোথায় যাবেন?‌ প্রথম পছন্দ হতে পারত কংগ্রেস। কিন্তু আপাতত সেখানে যাওয়ার উপায় নেই। কারণ, তাঁকে এই রাজ্যেই রাজনীতিটা করতে হবে। তাছাড়া, তাঁকে নিতে গিয়ে কংগ্রেস হাইকমান্ড মমতার সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে যাবেন কোন দুঃখে!‌ আবার বিজেপির বিরুদ্ধে এতটাই অলআউট চলে গেছেন, ঢোঁক গিয়ে এখন সেখানে যাওয়াও কঠিন। ফলে, তাঁকে থাকতে হবে সেই তৃণমূলেই। সংসদে কেউ তাঁর শুভাকাঙ্খী নন, এটা বুঝেই তাঁকে তৃণমূলে থাকতে হবে, তাঁদের হয়ে গলা ফাটাতে হবে। এটাই বোধ হয় মহুয়ার সবথেকে বড় বিড়ম্বনা।

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.