সৌরভ যে শিল্পপতি, এতদিন ডোনাও বোধহয় জানতেন না‌

অজয় নন্দী

ভাগ্যিস, তিনি স্পেনে গিয়েছিলেন। নইলে, আমরা এমন একজন অনাবাসী শিল্পপতির কথা জানতেই পারতাম না। সেই অনাবাসী শিল্পপতির নাম সৌরভ গাঙ্গুলি।

কোনও প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীর বিদেশ সফর নতুন কিছু নয়। বহু বছর ধরেই চলে আসছে। তাঁরা বিদেশে যান। সেইসব দেশের শিল্পপতিদের কাছে আবেদন জানান, আমাদের দেশ/‌রাজ্যে আসুন। বিনিয়োগ করুন। প্রবাসী ভারতীয়দের কাছে আরও একটু বেশি আবদার করেই বলেন, এখানে তো আপনারা অনেককিছুই করছেন। নিজের দেশ/‌রাজ্যেও কিছু একটা করুন।

সেই মঞ্চে হঠাৎ সৌরভ গাঙ্গুলি ঘোষণা করে বসলেন, তিনি শালবনীতে ইস্পাত কারখানা খুলবেন। শুধু তাই নয়, এর আগেও তাঁর নাকি দুটি ইস্পাত কারখানা আছে। একটি দুর্গাপুরে, একটি পাটনায়।

এই বাংলায় এত এত সাংবাদিক নিজেদের সৌরভের ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করেন, তাঁরা কেউ জানেন, সৌরভ গাঙ্গুলি দুটি ইস্পাত কারখানার মালিক?‌ ডোনা বা সানা জানতেন কিনা, সেটাও বলা মুশকিল। তাহলে মালিক হলেন কীভাবে?‌

বহুদিন ধরেই শোনা যায়, আইএসএলের এটিকে ফ্র‌্যাঞ্চাইজিতে তাঁর শেয়ার আছে। মানে, লভ্যাংশের একটা অংশ তিনি পাবেন। বেশ, বোঝা গেল। কিন্তু তাঁর আর্থিক বিনিয়োগ কত?‌ মানে, নিজের পকেট থেকে কত টাকা ঢেলেছেন, এক দশকে এমন কোনও তথ্য সামনে এসেছে?‌ আদৌ কোনও টাকা দিয়েছেন কিনা, নিশ্চিত করে বলা যাবে?‌

আচ্ছা, ধরুন আপনার একটি কারখানা আছে। বা আপনি কারখানা খুলতে চান। সামনে যদি সৌরভ গাঙ্গুলির নামটা থাকে, আপনার সুবিধা কী কী?‌
১)‌ সহজেই জমি পেয়ে যাবেন। যতটা জমি চান, তার থেকেও হয়ত বেশি পেয়ে যাবেন।
২)‌ ডিএম, এসপি আপনাকে ঘাঁটাবে না। যখন দেখা করতে চাইবেন, সময় পেয়ে যাবেন। যা সাহায্য চাইবেন, পেয়ে যাবেন।
৩)‌ কারখানার জন্য রাস্তা লাগে, বিদ্যুৎ লাগে, জল লাগে। সৌরভের নাম সামনে থাকলেই মুশকিল আসান। সব দায়িত্ব সরকার নিজের কাঁধে তুলে নেবে।
৪)‌ কারখানা করতে গেলে ‘‌তোলা’‌ দিতেই হয়। সামনে সৌরভের নাম থাকলে তৃণমূলের নেতারাও সমঝে চলবেন। কেউ টাকা চাওয়ার সাহস দেখাবেন না। কারণ, জানেন, সৌরভ একবার নালিশ করে দিলেই বিপদ আছে।
৫)‌ ব্যাঙ্ক লোন চাই!‌ নো প্রবলেম। ম্যানেজার লোন দেওয়ার জন্য বসে আছেন। সব শর্ত শিতিল করতেও রাজি আছেন। ম্যানেজারকে বা তাঁর মেয়েকে সৌরভের সঙ্গে একটা সেলফি তুলিয়ে দিলেই হল। আর সৌরভের সঙ্গে এক কাপ চা খাইয়ে দিতে পারলে তো কথাই নেই। এমনকী লোন শোধ করতে না পারলেও ম্যানেজার ঘাঁটাবেন না।

এ তো গেল পাঁচ দফা। চাইলে, এমন কুড়ি দফা কারণ লেখা যায়। মোদ্দা কথা, সৌরভ সঙ্গে থাকলে, তাঁর নামটা জড়িয়ে থাকলে আপনার নানা রকম সুবিধা। সেই কৃতজ্ঞতার কারণে যদি দু’‌পার্সেন্ট বা পাঁচ পার্সেন্ট লভ্যাংশ দিতেই হয়, তাও আপনার লোকসান নেই। তাহলে দু’‌পার্সেন্ট বা পাঁচ পার্সেন্ট দিতে বাধা কোথায়?‌ আপনারও বাধা নেই। সৌরভেরও বাধা নেই। ব্যাস, স্পেনের মঞ্চ থেকে ঘোষণা হয়ে গেল। গোটা দেশ ব্যাপী পাবলিসিটি হয়ে গেল। আর কী চাই?‌

বেহালার ছেলে। কারখানা করবেন শালবনীতে। তার ঘোষণা হল স্পেন থেকে। বাঙালি, তোমার উন্নতি ঠেকায় কে‌!‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.