দিলীপ ঘোষ আগেই বুঝেছিলেন, শুভেন্দুও হাড়ে হাড়ে বুঝছেন

ধীমান সাহা

দিলীপ ঘোষ মেঠো মানুষ। অত রেখেঢেকে কথা বলতে পারেন না। যা মনে করেন, বেশিক্ষণ চেপে রাখতে পারেন না। বলে ফেলেন। এটা নিয়ে তাঁকে কম ব্যঙ্গ, কম কটাক্ষ শুনতে হয়নি। কিন্তু তিনি তাঁর মতোই। তাঁকে চেনা য়ায়, বোঝা যায়।

তিনি অনেক আগেই বুঝে গিয়েছিলেন, সিবিআই বা ইডি আসল কাজের কাজ কিছুই করবে না। তিনি অনেক আগে থেকেই বুঝে গিয়েছিলেন, এই দুই তদন্তকারী সংস্থার হাত–‌পা বেঁধে রাখা হয়েছে। কারা বেঁধে রেখেছেন, কেন বেঁধে রেখেছেন, তিনি বিলক্ষণ জানতেন। তিনি বুঝেছিলেন, দিল্লির নেতৃত্ব এই রাজ্য থেকে কখনই তৃণমূলকে সরাতে চায় না। তৃণমূলকে রেখে দিতে পারলেই তাঁদের লাভ। তাই, তৃণমূলকে অক্সিজেন দিয়ে টিকিয়ে রাখতে যা যা করার দরকার, মোদি–‌অমিত শাহরা তাই তাই করবেন। দিলীপ ঘোষ শুরুতে দলের মধ্যে উষ্মা প্রকাশ করতেন। মাঝে মাঝে দলের বাইরেও বলে ফেলেছেন। সেই কারণেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হল। সেই কারণেই বারবার তাঁর মুখ বন্ধ করার এত আয়োজন।‌

এবার শুভেন্দু অধিকারী। তিনি গতবছর হুঙ্কার ঝাড়লেন, পুজোর আগেই কিছু একটা হতে চলেছে। কিছুই হল না। এবার এলেন ডিসেম্বর ধামাকায়। ডিসেম্বরের মধ্যেই নাকি বড় সড় একটা ধামাকা হতে চলেছে। আসলে, দিল্লির নেতাদের আশ্বাসে তাঁর মনে হয়েছিল, দিল্লি বুঝি নড়েচড়ে বসেছে। কিন্তু তাঁরা যে নিজেদের রাজনৈতিক অঙ্কটুকুই বোঝেন, তাঁরা যে শুধু নিজেদের ক্ষমতায় থাকাটুকুই নিশ্চিত করতে চান, এই সহজ সত্যিটা শুভেন্দু সত্যিই বোঝেননি। বুঝলেন, অনেক দেরিতে। যখন ডিসেম্বরটা জানুয়ারি হয়ে গেল। জানুয়ারিটা ফেব্রুয়ারি হয়ে গেল। আস্তে আস্তে সেপ্টেম্বর হাজির হয়ে গেল। সেই পুজো থেকে এই পুজো হাজির হয়ে গেল।

মোদ্দা কথা, নিজেদের আসন সুরক্ষিত রাখতে বিরোধী শক্তির বিভাজন চাই। বিভিন্ন রাজ্যে অক্সিজেন দিয়ে কিছু আঞ্চলিক শক্তিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। দিল্লির নেতারা তৃণমূলের বিরুদ্ধে লোকদেখানো বিবৃতি দেবেন, ভাষণ দেবেন। কিন্তু তলায় তলায় সিবিআই বা ইডি–‌র তদন্তকে ঠাণ্ডাঘরে পাঠিয়ে দেবেন। নেহাত হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে তদন্ত, না হলে যেটুকু হচ্ছে, সেটুকুও হত না। সারদার মতো চিরনিদ্রায় চলে যেত। দিলীপ ঘোষ আগেই বুঝেছিলেন। শুভেন্দু অধিকারীও বুঝছেন। মাঝে মাঝে সেই উপলব্ধির কথা বেরিয়েও আসছে। সুকান্ত মজুমদারও কি বুঝছেন না!‌ কিন্তু বুঝলেই কী আর করার আছে!‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.