ফুটো মস্তান হুমকি দিচ্ছে, এরপরও বলবেন প্রধানমন্ত্রী সাহসী?‌

রক্তিম মিত্র

যথারীতি সেই এক চিত্রনাট্য। সকাল থেকে সাজো সাজো রব। এই তিনি বাড়ি থেকে বেরোলেন। এই তিনি সিজিও কমপ্লেক্সে এলেন। রাস্তায় পুলিশে ছয়লাপ। করুণাময়ীর মোড়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। এই তিনি ঢুকলেন।

সারাদিন ধরে নানা জল্পনা, তাঁকে কী কী জিজ্ঞেস করা হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেরিয়ে যায়। ভেতরে ঠিক কী হচ্ছে?‌ সন্ধেবেলায় যথারীতি টিভিতে নানা পক্ষের আলোচনা। আইনের নানা ধারা নিয়ে আলোচনা। সেখানে ৩৪ বছর, কেন্দ্রীয় সরকার ঘুরে নানা বিষয় নিয়ে জ্ঞানগর্ভ ভাষণ চলে। কিন্তু আসল বিষয়টা বড়ই লঘু।

রাত নটা। তিনি বেরিয়ে আসছেন। চ্যানেলজুড়ে বিরাট ব্যস্ততা। সব আলোচনা নিমেশে থমকে গেল। সব ক্যামেরা তাঁর দিকে। যেন মেসি বা রোনাল্ডো বুঝি কলকাতায় নামলেন। সব চ্যানেলের বুম আগাম হাজির। সব চ্যানেলে লাইভ। এই তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। তিনি একতরফা বলে যান। বলেই যান। প্রশ্নের নামে একটা করে ফুলটস বল। একটু বেসুরো প্রশ্ন এলেন, ‘‌আপনি কোন চ্যানেল’‌?‌ তারপর তেড়েফুঁড়ে যাওয়া। মাঝে হিন্দি চ্যানেলের কথা মাথায় রেখে কয়েক লাইন হিন্দি। ইংরাজি চ্যানেলের কথা মাথায় রেখে কয়েক লাইন ইংরাজি। সব কাগজের প্রথম পাতা ফাঁকাই রাখা হয়। পরেরদিন সকালে সেটাই গিলতে হবে।

মোটামুটি এটাই চিত্রনাট্য। যতবার তিনি জেরায় আসবেন, ততবার এভাবেই ভাষণ দিয়ে যাবেন। গোটা বাংলাকে তা গিলতে হবে। ভাবতেও অবাক লাগে, এই রাজ্যে একের পর এক সংগঠিত অপরাধ। সব অপরাধের মূল অভিযুক্ত তিনি। বলতেই পারেন, প্রমাণ কোথায়?‌ আচ্ছা, প্রমাণ জোগাড় করার প্রাথমিক দায় কার বলুন তো!‌ পুলিশের। সেই পুলিশ তাঁকে সেলাম ঠুকতেই ব্যস্ত। তিনি আসবেন বলে গোটা এলাকা পুলিশে মুড়ে ফেলা হয়। নিন্দুকেরা বলেন, কোন জেলায় কে পোস্টিং হবেন, সেই সিদ্ধান্তও নাকি তিনি নেন। সেই পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করবে, এটা অতিবড় পাগলকেও বিশ্বাস করানো যাবে?‌

সেই পুলিশের মাথা কে?‌ তাঁরই পিসিমণি। তিনিও গলা ফুলিয়ে বলে চলেন, তাঁর ভাইপোর বিরুদ্ধে নাকি কোনও প্রমাণ নেই। আরে বাবা, প্রমাণ নেই, এটা কার ব্যর্থতা?‌ নিজের ব্যর্থতাকে বড়াই করে বলতে নেই, এই বোধটুকুও নেই!‌ যাই হোক, এখন তদন্তের দায়িত্ব সিবিআই–‌ইডির। এখনও বিশ্বাস করি, সিবিআই–‌ইডি যদি নিজের দক্ষতার পাঁচ শতাংশও দেখাতে পারত, তাহলে এই বাতেলা বাংলার মানুষকে শুনতে হত না। বাংলার শিক্ষিত বেকারদের ভবিষ্যৎ এতখানি অন্ধকার হয়ে উঠত না। কোন রাজনৈতিক বোঝাপড়ায় তিনি বাইরে আছেন, সেটা এখন নিচুতলার তৃণমূল নেতৃত্বও জানেন, এমনকী বিজেপি নেতৃত্বও জানেন।

সত্যিই অবাক লাগে, আমাদের কেন্দ্রীয় সরকার এতটা মেরুদণ্ডহীন?‌ তিনি দিনের পর দিন জেরা থেকে বেরিয়ে এসে এমন বুক ফুলিয়ে ভাষণ দিয়ে চলেছেন। তারপরেও তাঁকে কিছুই করা যাচ্ছে না?‌ মানছি, অনেক প্রমাণ লোপাট হয়ে গেছে। হয়ত ৯৫ শতাংশ প্রমাণ পাওয়া যাবে না। তবু সিবিআই বা ইডি অফিসারদের দক্ষতাও তো কম নয়। তাঁরা যদি ৫ শতাংশ প্রমাণও খুঁজে পান, সেটাও হবে পর্বতসমান। সেই পাঁচ শতাংশ অপরাধের অঙ্কটাই হয়ত কয়েক হাজার কোটির।

বিশ্বাস করুন, সেই দুর্বৃত্তের প্রতি রাগ হয়নি। করুণা হচ্ছিল সিবিআই–‌ইডির ওপর। অফিসারদের দক্ষতার প্রতি সম্মান রেখেও বলতেই হচ্ছে, এই সীমাহীন ব্যর্থতার বোঝা আর কতদিন বয়ে চলতে হবে?‌ বড্ড করুণা হচ্ছিল দেশের প্রধানমন্ত্রী আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপর। একজন ফুটো মস্তান প্রতিবার এমন হুঙ্কার দিয়ে চলেছেন। তাঁরা কিছুই করতে পারছেন না। সত্যিই ক্ষমতার মোহ মানুষকে কত অসহায় করে দেয়!‌

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.