স্বরূপ গোস্বামী
আবার মন্ত্রিসভার ছোটখাটো একটা রদবদল। কিন্তু তারপরেও আসল গলদটা থেকেই গেল।
আচ্ছা, এই রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর নাম কী? রাস্তায়, বাসে, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্নটা একবার হাওয়ায় ভাসিয়ে দিন তো।
দেখুন, নানা রকম উত্তর পাবেন। কেউ হয়ত এখনও অমিত মিত্রর নাম বলে বসবেন। যাঁরা একটু বেশি জানেন, তাঁরা হয়ত বলবেন, ওটা মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই রয়েছে।
হাতে গোনা কেউ কেউ হয়ত বলবেন, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
আচ্ছা, চন্দ্রিমা কি ক্যাবিনেট মন্ত্রী? উত্তর হল, ‘না’। তাহলেই ভেবে দেখুন, যিনি বাজেট পেশ করবেন, যাঁর হাতে রয়েছে অর্থ দপ্তর, তিনি ক্যাবিনেট মন্ত্রীই নন। রাজ্যে প্রায় তিরিশজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী আছেন। সেই তালিকায় চন্দ্রিমার নাম নেই। অথচ, তিনি কিনা অর্থমন্ত্রী।
স্বাস্থ্য বা আইন মন্ত্রকও চন্দ্রিমার হাতে রয়েছে। কিন্তু সেখানে তিনি প্রতিমন্ত্রী। অর্থাৎ, স্বাস্থ্যের মূল দায়িত্বে মমতা ব্যানার্জি, প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা। বা আইন দপ্তরের মন্ত্রী মলয় ঘটক, প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা। কিন্তু অর্থদপ্তর কোনও ক্যাবিনেট মন্ত্রীর হাতে নেই। পুরোপুরি চন্দ্রিমার হাতেই রয়েছে। বিশ্বাস না হলে রাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটেই দেখে নিন।
উদ্যান পালন থেকে গ্রন্থাগার, পশুপালন থেকে সমবায় রয়েছে ক্যাবিনেটের তালিকায়। জায়গা হয়নি অর্থদপ্তরের মন্ত্রীর। তাহলেই ভেবে দেখুন, কারা চালাচ্ছেন প্রশাসন। ভারতের কোনও রাজ্যে এমন নজির আছে ? পৃথিবীর কোনও দেশে আছে কিনা সন্দেহ। এরপরেও সরকারকে ধন্য ধন্য করতে হবে? অর্থমন্ত্রীকে যে অন্তত ক্যাবিনেট মন্ত্রী করতে হয়, এই ন্যূনতম জ্ঞানটুকু যাঁর নেই, তিনি কিনা আইন পাশ করেছেন! তিনি কিনা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী! ভাবতে লজ্জা হয় না?
এত এত আমলা। তাঁদের কারও মনে হল না, এটা করা যায় না! এতজন মন্ত্রী, এত বুদ্ধিজীবী, তারপরেও কেউ এই সুপরামর্শটা দিলেন না! অবাক লাগে বিরোধীদের দেখেও। তাঁদেরও পড়াশোনা, চর্চার মান বড়ই নিম্নগামী। কোন বিষয়টা তুলে ধরতে হয়, কোন বিষয়টা নিয়ে সমালোচনা করতে হয়, এই বোধটুকুও তাঁদের লোপ পেয়ে যায়। রাকেশ রোশন চাঁদে গিয়েছিল কিনা, নজরুল ইসলাম মহাভারত লিখেছিলেন কিনা, এসব নিয়ে খিল্লি করাতেই তাঁদের যত আনন্দ। যেগুলো প্রশাসনের আসল অপদার্থতা ও মূর্খামির দিক, সেগুলো সম্পর্কে এঁরা খবরও রাখেন না। বিজেপির কথা তো না হয় ছেড়েই দিলাম, এমনকী বামেদেরও এই ভয়ঙ্কর অনিয়ম সম্পর্কে সোচ্চার হতে দেখি না।
যেমন সরকার আমাদের প্রাপ্য, আমরা ঠিক তেমন সরকারই পেয়েছি। উল্টোটাও সত্যি। যেমন বিরোধী প্রাপ্য, তেমন বিরোধীও পেয়েছি। মূর্খামির এই বাজার গরম করা প্রতিযোগিতা চলতে থাকুক।