গৌতম দেব যদি ইডি কর্তাদের একটু ক্লাস নিতেন!‌


রক্তিম মিত্র

লিপস অ্যান্ড বাউন্স। এই নামটা বাংলার রাজনীতিতে আবার হঠাৎ করে চর্চায় চলে এসেছে। আচ্ছা, এই সংস্থার কাজটা ঠিক কী?‌ স্বয়ং তৃণমূল নেতারাও জানেন না। মানে, জানলেও বলতে পারবেন না।

টিভি চ্যানেলগুলি এমন হামলে পড়ে, এমন গলা ফুলিয়ে লিপস অ্যান্ড বাউন্সের কথা বলছেন, যেন এই প্রথম নামটা শোনা গেল। যেন এই প্রথম জানা গেল, এই সংস্থার মাধ্যমে বেআইনি লেনদেন হয়। অর্থাৎ, বিস্তর গবেষণা করিয়া গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে আসিলেন যে, গরু ঘাস খায়।

ফিরে চলুন বছর দশেক আগের কথায়। এই লিপস অ্যান্ড বাউন্স নামটাকে প্রথম সামনে এনেছিলেন গৌতম দেব। এই ভুঁইফোড় কোম্পানির মালিক কে, কত টাকার টার্নওভার, কী কী কর্মকাণ্ড হয়— তা সেদিন তথ্যপ্রমাণ–‌সহ তুলে ধরেছিলেন গৌতম দেব। তাঁর হাতে কোনও সিবিআই ছিল না। কোনও ইডি ছিল না। তাঁর কোনও ফোন ট্যাপ করার বা কলরেকর্ড খতিয়ে দেখার ক্ষমতা ছিল। কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট দেখার সুযোগ ছিল না। কে কবে, কোন ফ্লাইটে বিদেশ গেছেন, সেসব জানারও উপায় ছিল না। তারপরেও গৌতম দেব যা যা তথ্য দিয়েছিলেন, তা চমকে ওঠার মতোই।

কিন্তু সেদিন এই বঙ্গ মিডিয়া সেইসব কথায় কান দেয়নি। এমনকী বঙ্গ সমাজও বিশেষ আমল দেয়নি। তাই গোকূলে বেড়ে চলেছেন দুর্বৃত্ত। গড়ে উঠেছে অপরাধের সাম্রাজ্য। অন্ধকার থেকে গাঢ় অন্ধকারে তলিয়ে গেছে বাংলার তরুণ ও যুবকদের ভবিষ্যৎ। এত বছর পর বিস্তর ঢক্কানিনাদের পর সিবিআই বা ইডি যেসব তথ্য সামনে আনছেন, তাঁদের দেখে সত্যিই করুণা হয়। এত বছর আগে গৌতম দেব যা যা বলেছিলেন, সেই জায়গায় পৌঁছতে এমন দক্ষ অফিসারদের এতদিন লেগে গেল!‌ আসলে, আদালতের ধাঁতানি না খেলে এটুকুও হত না।

সিবিআই বা ইডির আধিকারিকটা কি এতটাই অযোগ্য?‌ মোটেই তেমনটা নয়। কোনও এক অদৃশ্য সুতোয় তাঁদের গতিবিধি বাঁধা আছে। নেহাত লোকদেখানো কিছু একটা করে দেখাতে হবে, আমরা চুপচাপ বসে নেই, আদালতের কাছে কিছুটা হলেও বোঝাতে হবে, তাই পর্বতের এই মুষিক প্রসব। ইডি কর্তারা কি সত্যিই আন্তরিকভাবে তদন্ত করতে চান?‌ বেশি কিছু করতে হবে না। সিএ ব্লকে একবার গৌতম দেবের বাড়ি থেকে ঘুরে আসুন। যদিও তিনি অসুস্থ। কথাবার্তা হয়ত কিছুটা জড়িয়ে যাবে। বুঝতে একটু সমস্যা হবে। তবু মস্তিষ্ক অনেকটাই সচল। কীভাবে তদন্ত করতে হয়, এখনও উনি দিব্যি শেখাতে পারবেন। যান, একটু ক্লাস করে আসুন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.