টাটাকে ভারত গৌরব!‌ দিদিমণির অনুমতি নিয়েছেন!‌

সোহম সেন

বহু বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে মোহনবাগান দিবস। ইস্টবেঙ্গলের মনে হয়েছে, তাঁদেরও এমন একটা দিবস থাকলে কেমন হয়!‌ মোহনবাগান দিয়ে আসছে মোহনবাগান রত্ন। ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের মনে হয়েছে, তাঁরা দেবেন ভারত–‌গৌরব।

প্রতি বছরই কাউকে না কাউকে দেওয়া হয়। এবার ঘোষণা হল রতন টাটার নাম। না, রতন টাটা কী করেছেন, সেই প্রশ্ন তোলার কোনও ধৃষ্টতা আমার নেই। ভারতীয় ফুটবলের জন্য, অন্যান্য খেলার জন্য তাঁর বিস্তর অবদান রয়েছে। জেআরডি টাটা স্পোর্টস কমপ্লেক্সে গেলেই এই বিশাল কর্মকাণ্ড বোঝা যাবে। সেদিক থেকে রতন টাটাকে সম্মানিত করার মধ্যে দোষের কিছু নেই।

কিন্তু তিনি কি আদৌ আসবেন?‌ প্রশ্নই ওঠে না। বয়সজনিত কারণে এখন বাইরে খুব একটা যান না। কিন্তু সুস্থ থাকলেই কি আসতেন?‌ মনে হয় না। হতে পারে, তাঁর কোনও প্রতিনিধি এসে হয়ত এই সম্মান নেবেন। হয়ত তাঁর দিক থেকে একটা ধন্যবাদ জ্ঞাপক চিঠি বা শুভেচ্ছাবার্তা আসতে পারে। তবে, কি ইস্টবেঙ্গল আগামীদিনের টাটাকে স্পনসর হিসেবে পাওয়ার জমি তৈরি করছে?‌ তাতেও চিড়ে ভিজবে বলে মনে হয় না।

কিন্তু এই রতন টাটাকে আমরা কি দিয়েছি?‌ একরাশ উপেক্ষা আর অপমানই ফিরিয়ে দিয়েছি। তাঁর স্বপ্নের প্রোজেক্ট আমরা ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছি। এত হাজার হাজার তরুণের কর্ম সংস্থানের সুবর্ণ সুযোগকে হেলায় হারিয়েছি। এত রাজ্য থাকতে তিনি বাংলায় তাঁর স্বপ্নের প্রোজেক্ট ‘‌ন্যানো কারখানা’‌ করতে চেয়েছিলেন। জমিরক্ষার নামে, পরিবেশ বাঁচানোর নামে আমরা টাটাকে তাড়িয়েছি। বলা ভাল, রাজ্যের শিল্প সম্ভাবনাকে শেষ করেছি।

বলতেই পারেন, একটি রাজনৈতিক দল এই আন্দোলন করেছিল। এর সঙ্গে রাজ্যের মানুষের কী সম্পর্ক?‌ সম্পর্ক আছে, কারণ, তার কয়েক বছর পর সেই দলটিকেই এই রাজ্যের মানুষ ক্ষমতায় এনেছিলেন। পরপর তিনবার সেই শিল্প তাড়ানো দলই ক্ষমতায়। এই রাজ্যে হাজার হাজার মউ চুক্তি হয়। শিল্প আর আসে না।

টাটাকে তাড়ানোর পরেও কি আমাদের অনুশোচনা হয়েছে?‌ একফোঁটাও হয়নি। তারপরেও ইস্টবেঙ্গল কর্তারা দাঁত কেলিয়ে পৌঁছে গেছেন তৃণমূলের মঞ্চে। সেই মুখ্যমন্ত্রীর দাদাকে জামাই আদর করে এনেছিলেন ক্লাবের কর্মসমিতিতে। স্পনসর আনতে হাত কচলে, দাঁত বের করে ছুটে যান সেই নবান্নে। যে ক্রীড়ামন্ত্রী নিজের ছবি তোলা ছাড়া আর কিছুই বোঝেন না, কথায় কথায় সেই ক্রীড়ামন্ত্রীকে ডেকে আনতেন না।

যদি সত্যিই রতন টাটার প্রতি শ্রদ্ধা থাকত, তাহলে দাঁত কেলিয়ে তৃণমূলের মঞ্চে যেতেন না। ক্লাবটাকে শাসকদলের লেজুড়বৃত্তির আখড়া বানাতেন না। রতন টাটাকে সম্মানিত করার কোনও নৈতিক অধিকার এই ক্লাবের আছে!‌ রতন টাটাকে সম্মানিত করব, আবার দাঁত কেলিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মঞ্চেও যাব, দু নৌকোয় পা দিয়ে চলা যায় না।

তাই রতন টাটা যদি সুস্থ থাকতেন, তবুও আসতেন না। তিনিও বোঝেন, কোথায় যেতে হয়, আর কোথায় যেতে নেই!‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.