সরল বিশ্বাস
বেশ কয়েকদিন টিভি চ্যানেলগুলি মেতেছিল একুশে জুলাই নিয়ে। কত মানুষ আসছেন, তাঁরা কোথায় আছেন, মেনুতে কী আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। একদিন আগে থেকে অ্যাঙ্গেলটা বদলে গেল। নেতৃত্ব কী বার্তা দিতে চাইছেন, ইত্যাদি ইত্যাদি।
ব্যস, একুশে জুলাই শেষ হল। দুদিন পরই মনে পড়ে গেল, আজ তো পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেপ্তারির এক বছর পূর্তি। অমনি ঝুলি থেকে বেরিয়ে এল সেই অর্পিতা। সেই ফ্ল্যাট থেকে টাকা উদ্ধার। শান্তিনিকেতনে সেই ‘অপা’র বাড়ি।
আসলে, পার্থর সঙ্গে যদি অর্পিতার অনুষঙ্গ না থাকত, তাহলে মিডিয়ার কাছে তা মুখরোচক খাদ্য হত না। যেহেতু অর্পিতা আছে, যেহেতু একটা সুন্দর মুখ আছে, যেহেতু একটা সুড়সুড়ি আছে, তাই টিআরপি নিশ্চিত। বাঙালিও তেমন বুভুক্ষু জাতি। দিনভর সেই গল্প গোগ্রাসে গিলতে লাগল। ফেসবুকে নানা কথা উগরে দিতে লাগল।
২৩ জুলাই শুধুই কি পার্থর গ্রেপ্তারির এক বছর? আসলে, একটু অন্যভাবেও দেখা যায়। এই দিনটা বোধ হয় ইডি আর সিবিআই এর সীমাহীন ব্যর্থতারও পর্ষপূর্তি। এক বছর হয়ে গেল এই কীর্তিমান গ্রেপ্তার হয়েছেন। প্রথম তিন চার দিনে কত কথাই না বেরিয়ে এল। কত সম্পত্তি, কত বান্ধবী, সব ঠিকুজি কুষ্ঠি–সহ বেরিয়ে এল।
কিন্তু আসল যেটা বেরিয়ে আসার কথা, সেটাই এখনও সিবিআই বা ইডি জানতে পারল না। কোর্টের ধাঁতানি খেয়ে কখনও কুন্তল, কখনও শান্তনু— এমন কিছু খুচখাচ এজেন্টের নাম সামনে এল। কিন্তু ইডি এখনও আসল মাথার হদিশ পেল না!
একটা বাচ্চা ছেলেও জানে, পার্থ চ্যাটার্জি নিজেও নেহাতই এক চুনোপুঁটি। তাঁর কার্যত কোনও ক্ষমতাই ছিল না। তাঁর ‘হুজুর’ ছিলেন অন্য কেউ। সেই হুজুর কে, সেটা বুঝতে কোনও গোয়েন্দা হওয়ার দরকার পড়ে না। একটু সাধারণ বোধ বুদ্ধি থাকলেই চলে। যে সিবিআই তিনদিনের মধ্যে এতকিছু বের করে ফেলল, সেই সিবিআই এক বছরে মাথার সন্ধান পেল না, এটা বিশ্বাসযোগ্য!
আমি নির্দোষ, আমার বিরুদ্ধে কিছু প্রমাণ নেই— এক বছর পরেও পার্থ চ্যাটার্জির মতো লোকেরা মিডিয়ার সামনে এমন বলার সাহস পায় কী করে? আসল হুজুর এত হুঙ্কার দিতে পারে কী করে?
পারে, কারণ, সিবিআই আর ইডি নামে দুটো চূড়ান্ত অপদার্থ এজেন্সি আছে। যাঁরা সব প্রমাণ হাতে থাকা সত্ত্বেও কোর্টে পেশ করতে পারে না। যেটা একদিনে হয়ে যায়, সেটা এক বছরেও করে উঠতে পারে না। আসলে দোষটা সিবিআই–এর নয়। তাঁরা চাইলে, একদিনেই এই রহস্য ভেদ করতে পারেন। কিন্তু কে বা কারা বারবার তদন্তের গতিকে শ্লথ করে দিচ্ছেন! সেই নাটের গুরু কারা?
না, ২৩ জুলাই পার্থর গ্রেপ্তারির বর্ষপূর্তি নয়। ২৩ জুলাই আসলে যিনি সিবিআই চালান, সেই বীরপুঙ্গবদের অপদার্থতার বর্ষপূর্তি। তাই এই বর্ষপূর্তির দিনে পার্থ বা অর্পিতাকে নিয়ে খিল্লি নয়। যদি গালাগাল দিতে হয়, ইডি কর্তাদের দিন। যদি ঘৃণা করতে হয়, দিল্লিতে বসে থাকা ওই নাটের গুরুদের করুন।