চন্দন ভট্টাচার্য
একুশে জুলাই কী বার্তা দেবে? কয়েকদিন আগে থেকেই এমন একটা প্রশ্ন ভেসে ওঠে। সভার পর প্রশ্নটা বদলে যায়। বলা হয়, একুশে জুলাই কী বার্তা দিল। একেকজন একেক রকম ব্যাখ্যা করেন। আমি রাজনৈতিক বিশ্লেষক নই। বড়জোর একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে চলমান রাজনীতির গতিপ্রকৃতিতে একটু চোখ রাখি। নিজের মতো করে বোঝার চেষ্টা করি।
আমার কাছে এবার মমতা ব্যানার্জির ভাষণের বিশেষ একটা তাৎপর্য আছে। এমন নিখুঁত হিসেব কষা ভাষণ বহুদিন শুনিনি। বলা যায়, অনেক বেশি পরিণতিবোধের পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর সভা মানেই এক মাথা থেকে সবাইকে গালমন্দ। জগাই, মাধাই, গদাই— এইসব উপমা। সবাই তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, এরকম একটা প্রচার করে আনন্দ পান। মুখ্যমন্ত্রী পদের গরিমা ভুলে গিয়ে আবোল–তাবোল বকে যান। সেই তুলনায় এবার অনেকটাই ব্যতিক্রম।
এবার তাঁর চোখ যেন জাতীয় রাজনীতিতে। নিজেকে জাতীয় নেত্রী হিসেবে তুলে ধরার একটা সচেতন প্রয়াস। যে কারণে কংগ্রেসের নামে কোনও সমালোচনা নয়। এমনকী চিরকাল ধরে যে সিপিএম বিরোধী রাজনীতি করে এসেছেন, এবার যেন সেখানেও অনেকটা মাপা পদক্ষেপ। বামেদের আক্রমণ করলেন, তবে অতি অল্প। মেরে কেটে আট–দশটা বাক্য। অর্থাৎ, বিরোধী হিসেবে বাম বা কংগ্রেসকে দেখছেন না, এটাই বোঝাতে চাইলেন। তাঁর মূল বিরোধিতা বিজেপি–র সঙ্গে এরকম একটা ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করলেন।
হঠাৎ, কংগ্রেস বা বাম সম্পর্কে এমন মনোভাব কেন? কয়েকদিন আগেই বেঙ্গালুরুতে হয়ে গেল বিরোধী জোটের বৈঠক। তার রেশ এখনও থেকে গেছে। বোঝাতে চাইলেন, তিনি যথার্থই বিজেপি বিরোধী। তিনি সার্বিক ঐক্য চান। তাই, অতীতের তিক্ততা মাথায় রাখতে চান না। তাই তিনি আগ বাড়িয়ে কোনও আক্রমণ করলেন না।
আসলে, খুব সুকৌশলে বোঝাতে চাইলেন, বাম বা কংগ্রেসের তেমন কোনও অস্তিত্ব নেই। তাদের এত গুরুত্ব দেওয়ার মানেও হয় না। লড়াইটা যে তৃণমূল বনাম বিজেপি, এমন ছবিই তুলে ধরতে চাইলেন। তিনি বোঝেন, লড়াইটা যদি দ্বিমুখী হয়, তবেই তাঁর সুবিধা। যে মুসলিম ভোট একটু একটু করে বাম–কংগ্রেসের দিকে আসছিল, সেই স্রোতকে আটকাতে হবে। তিনিই একমাত্র বিজেপি বিরোধী, এরকম একটা ভাবমূর্তি তৈরি করতে হবে। কারণ, অন্য দলকে গালাগাল দেওয়া মানে কিছুটা প্রাসঙ্গিক করে তোলা। তার থেকে স্রেফ উপেক্ষা করো। তাহলেই, লোকে বুঝবে, ওরা লড়াইয়েই নেই। তাহলেই তৃণমূল বিরোধী ভোট ওদিকে যাবে না। এমনকী বিজেপি বিরোধী মুসলিম ভোটও ওদিকে যাবে না।
এই কারণেই তিনি দ্বিমুখী লড়াইয়ের আবহ তৈরি করলেন। ইচ্ছে করেই, বাম–কংগ্রেসকে উপেক্ষা করলেন। খুব হিসেবি এই পথচলা।