তিনি অপদার্থ, প্রমাণ করেই ছাড়লেন রাজীব

ধীমান সাহা

সাতের দশকে ইস্টবেঙ্গলের দুই রিক্রুটার ছিলেন। জীবন চক্রবর্তী ও পল্টু দাস। ময়দান তাঁদের জীপ জুটি নামেই চিনত। কোন দল থেকে কোন ফুটবলারকে ভাঙিয়ে আনতে হবে, তাঁদের জানিয়ে দিলেই হল। তাঁরা ঠিক ধরে এনে দেবেন। একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম টোটকা। কারও বাড়িতে হয়ত বাজার পাঠিয়ে দিচ্ছেন। কারও মায়ের জন্য লুচি ভেজে দিচ্ছেন। কারও বাড়ির দরজায় শুয়ে রাত কাটিয়ে দিচ্ছেন। কারও বাড়িতে সারা রাত পাহারা দিচ্ছেন। আবার কাউকে একটু আধটু ভয় দেখানো, হুমকি দেওয়া। কোথাও এক–‌আধটা উড়ো ফোন। কোথাও কাগজে উল্টো খবর খাইয়ে দেওয়া।

নানাবিধ সেই কৌশল। যা যে কোনও রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজকে হার মানাবে। মরশুম শুরুর আগে তাঁদের কদর বেড়ে যেত। আবার মরশুম শুরু হয়ে গেলে কদর কমে যেত। একবার একটি ম্যাচে গ্যালারিতে বসে আছেন জীবন চক্রবর্তী। কোনও এক ফুটবলার একটি বিশ্রী গোল নষ্ট করলেন। গ্যালারিও উত্তাল। অনেকে বলতে শুরু করলেন, কে একে ধরে আনল, তাকে খুঁজে বের কর। জীবনবাবু রেগে ফায়ার। হাফ টাইমে সবাই তখন মাঠের মাঝে বসে। ভোকাল টনিক দিয়ে চলেছেন কোচ পিকে ব্যানার্জি। তিনি বোঝাচ্ছেন, কোথায় কোথায় ভুল হল, দ্বিতীয়ার্ধে কী রকম স্ট্র‌্যাটেজি হওয়া উচিত।

হঠাৎ মাঠের মাঝখানে হাজির জীবন চক্রবর্তী। যে ফুটবলার গোল নষ্ট করেছিলেন, সটান চলে গেলেন তাঁর কাছে। গিয়েই সেই বিখ্যাত বাঙাল ভাষায় বলতে শুরু করলেন, ‘‌হ্যাঁ রে, আমরা না হয় ফুটবল বুঝি না। যাকে ধরে আনতে বলে, তাকে ধরে এনে দিই। কিন্তু তুই তো ফুটবলার। তুই তো বুঝিস, তোর ইস্টবেঙ্গলে খেলার যোগ্যতা নেই। তাহলে সেদিন আমাদের বললি না কেন?‌ কেন ইস্টবেঙ্গলের জার্সি গায়ে পরে নিলি?‌ তোর তো বলা উচিত ছিল, আমাকে দলে নেবেন না। আমার সেই যোগ্যতা নেই।’‌

এই ২০২৩ এ এসে সাতের দশকের সেই ফুটবলের গল্প টেনে আনার কারণ!‌ সেই রাজীব সিনহা। তাঁকে বলতে ইচ্ছে করে, ও হে, আপনি তো আইএএস অফিসার। আপনার তো বোঝা উচিত ছিল, আপনি একজন হুকুম তামিল করা পেয়াদা। নির্বাচন কমিশনারের কী দায়িত্ব, আপনি তো জানেন। আপনি বোঝেননি, এই চেয়ারে বসার কোনও যোগ্যতা আপনার নেই?‌ তাহলে কেন বললেন না, ম্যাডাম দয়া করে আমাকে এই দায়িত্ব দেবেন না। নির্বাচন কমিশনার হতে গেলে যে যে যোগ্যতা লাগে, তার পাঁচ পারসেন্টও আমার নেই।

সরকার চেয়েছিল একজন জো হুজুর মার্কা লোক। যাকে যা নির্দেশ দেওয়া হবে, তাই পালন করবেন। মুখ্যমন্ত্রী বুঝেছিলেন, রাজীব সিনহা তেমনই একজন লোক। যাঁকে উঠতে বললে উঠবেন, বসতে বললে বসবেন। আর রাজীব সিনহাও প্রমাণ করেই ছাড়লেন, তাঁর সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর মূল্যায়ন একেবারেই সঠিক ছিল।

বিরোধীরা শুধু্ শুধুই হতাশ হচ্ছেন। আরে বাবা, প্রত্যাশা থাকলে তবে তো হতাশ হওয়ার প্রশ্ন। এই রাজীব সিনহা মাথা উঁচু করে কাজ করবেন, এমনটা কে প্রত্যাশা করেছিলেন!‌ যিনি করেছিলেন, তাঁরই মানসিক সমস্যা। তিনি বরং ডাক্তার দেখিয়ে আসুন।

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.