সব্যসাচীরা এত সাহস পান কোত্থেকে?‌

অজয় কুমার

কথায় আছে, দুরাত্মার ছলের অভাব হয় না। সে নতুন নতুন ফন্দি নিয়ে হাজির হয়। রোজ তার মিথ্যে বেআব্রু হয়ে যায়। তবু সে মিথ্যাচার ছাড়তে পারে না।

এবার টার্গেট নওসাদ সিদ্দিকি। বাম–‌কং–‌আইএসএফ জোটের একমাত্র বিজয়ী প্রার্থী। কিন্তু তাঁকেও কিনতে হবে। তাঁকেও দলে নিতে হবে। নইলে চলছে না। প্রথমে অর্থের টোপ দাও, মন্ত্রীত্বের টোপ দাও। তাতে কাজ না হলে মৃদু হুমকি দাও। তাতে কাজ না হলে নানাভাবে হেনস্থা করো। তাতেও কাজ না হলে মিথ্যে মামলা দাও। তার পরের ধাপ হল, জেরে পোরো। কোনও চেষ্টারই কসুর ছিল না। দেড় মাস জেল খাটানো হল। কিন্তু তারপরেও নওসাদ সিদ্দিকিকে কেনা যাচ্ছে না।

একা নওসাদকে এত ভয় কেন?‌ একদিকে শাসক, যাদের মুখে লাগামহীম হিংসা আর কুৎসা। আরেকদিকে একা নওসাদ। এত হেনস্থার মুখেও কী দায়িত্বশীল আচরণ। কী দায়িত্বশীল কথাবার্তা। এত প্রলোভন, এত হুমকির পরেও কী ধীর, স্থির, শান্ত। কতই বা বয়স!‌ এর মধ্যেই কী পরিণতিবোধ!‌ কী অসম্ভব বিনয়, ভদ্রতা। দেখেও তো শিখতে পারেন।

কিন্তু এঁরা শেখার বান্দা নন। এঁদের নিত্যনতুন ফন্দি আঁটতে হবে। এবং সেইসব নোঙরামি, সেইসব ফন্দিফিকির একেবারে সর্বোচ্চ স্তরের অনুমোদন প্রাপ্ত। এবার তাঁকে ফাঁসানোর নতুন ফন্দি। এক মহিলাকে দিয়ে থানায় এফআইআর করানো হল। নওসাদ নাকি তাঁকে ধর্ষণ করেছেন। একটা নয়, একেবারে দু–‌দুটো থানায়। সেই এফআইআর করার সময় গদগদ মুখে কে হাজির ছিলেন!‌ তৃণমূলকে গালমন্দ করে বিজেপিকে যাওয়া, পরে ডিগবাজি মেরে ফের তৃণমূলে ফিরে আসা মহান পাল্টিবাজ সব্যসাচী দত্ত। ভাবতে অবাক লাগে, এরকম একজন কিনা বিধাননগরের মেয়র ছিলেন!‌ এরকম একজন পাল্টিবাজকে কিনা এরপরেও বিধান নগর পুরনিগমের চেয়ারম্যান করা হয়েছে। আর কোনও লোক পাওয়া গেল না!‌ আসলে, যাঁরা যেমন, তাঁরা ঠিক তেমনটাই খুঁজে নেন।

যাই হোক, নওসাদে ফেরা যাক। যিনি অভিযোগ করলেন, তিনি কে?‌ প্রথমে বলা হল, এয়ারপোর্ট থানার বাসিন্দা। পরে জানা গেল, তাঁর বাড়ি মুর্শিদাবাদের ডোমকলে। আরও পরে জানা গেল, তিনি ডোমকল এলাকার তৃণমূল নেত্রী। জেলার প্রথমসারির প্রায় সব নেতার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি। নিছক সেলফি তোলা নয়, মিছিলে হাঁটছেন একেবারে পাশে, সামনের সারিতে। মঞ্চেও তিনি। বলা হল, তিনি নাকি ভাইকে নিয়ে অভিযোগ করতে এসেছিলেন। পরে জানা গেল, এই ভাইটিও ভুয়ো। তাঁর যিনি আসল ভাই, তিনি কিছুই জানেন না। এবং এই ভুয়ো ভাইটিও বেশ কীর্তিমান। এলেন মুখ ঢেকে। খবরে প্রকাশ, এই ভাইটি নাকি আগে ভুয়ো পুলিশ সেজে তোলা তুলতেন। এই মহান কাজে জেলেও গিয়েছিলেন।

ভাবতে অবাক লাগে, এক বিরোধী বিধায়ককে কলঙ্কিত করতে এঁদের কত নিচে নামতে হয়!‌ কোনও কিছু না জেনেই সব্যসাচীর মতো একজন নেতা চলে গেলেন এফআইআর করাতে!‌ ধরা পড়ে যেতে, এখন বলছেন, তিনি ওই মহিলাকে চেনেন না!‌

ভাবা যায়, বিধান নগর পুরনিগমের চেয়ারম্যান (‌প্রাক্তন মেয়র ও বিধায়ক)‌ একজন বিরোধী বিধায়কের নামে ভুয়ো ধর্ষণের অভিযোগ জানাতে থানায় ছুটছেন!‌ ঘটনা না জেনে, সেই অভিযোগকারীকে না চিনে, নওসাদের নামে এমন মারাত্মক বিকৃত অভিযোগ আনছেন!‌ প্রশ্নটা হল, সব্যসাচীরা এত নিচে নামার সাহস পান কোত্থেকে?‌ কার আশ্বাসে, কার প্রশ্রয়ে এই পাল্টিবাজরা এতবড় দুষ্কর্ম করতে পারেন!‌

রাজ্যে যদি সত্যি প্রশাসন বলে কিছু থেকে থাকে, মুখ্যমন্ত্রীর যদি নিজের চেয়ারের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা থেকে থাকে, অবিলম্বে এই জালিয়াতটিকে গ্রেপ্তার করুন। নইলে, বুঝতে হবে, এই ষড়যন্ত্রের হাত অনেক লম্বা। নইলে, বুঝতে হবে, নওসাদকে কলঙ্কিত করার এই পরিকল্পনা একা সব্যসাচীর ছিল না। তিনি ছিলেন হুকুম তামিল করা পেয়াদা মাত্র। অবিলম্বে ঘটনার আসল তদন্ত হোক। দোষটা সব্যসাচীর নয়। তিনি কেমন, সবাই জানেন। এটা জানার পরেও যাঁরা তাঁকে বিধান নগরের মতো জায়গার চেয়ারম্যান করেন, লজ্জাটা তাঁদেরই পাওয়া উচিত। আসল ঘৃণা, আসল ধিক্কারটা তাঁদেরই প্রাপ্য।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.