এমন ভ্রমণপ্রিয় জাতি আর কটা আছে!‌

দিব্যেন্দু দে

পুজো এলেই বাঙালির মন উড়ু উড়ু। কোথায় যাবে, সে অনেক আগে থেকেই ঠিক করে নেয়। কারও পছন্দ পাহাড়, কারও সমুদ্র, কারও জঙ্গল। পাহাড় মানে কাশ্মীরও হতে পারে, কেরলও হতে পারে, আবার পড়শি রাজ্য ওড়িশাও হতে পারে। আর নিজের রাজ্যের উত্তরবঙ্গ তো আছেই। সমুদ্র মানেও তাই। যাঁর ট্যাকের জোর বেশি, তাঁর পছন্দ হয়ত গোয়া। কেউ গেলেন তামিলনাড়ুর দিকে। কেউ আবার বাঙালির চিরন্তন পুরী। তাই বলে কি দিঘা বা মন্দারমণি ফাঁকা থাকবে?‌ মোটেই না। জঙ্গল মানেও সেই এক কথা। দূরদূরান্তের জঙ্গল যেমন আছে, এই বাংলাতেও জঙ্গলের অভাব নেই।

কিন্তু মুশকিলটা হল ট্রেনের টিকিট। চার মাস আগে থেকে টিকিট কাটা যায়। কিন্তু এত এত ট্রেন থাকার পরেও থিম সং সেই ‘‌ঠাঁই নাই, ঠাঁই নেই।’ টিকিটের আশায়‌ ভোর থেকে লাইন দেওয়া। কিন্তু কাউন্টার খুলতে না খুলতেই শেষ। চার মাস আগে টিকিট কাটবেন, তাও কনফার্ম টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। ষষ্ঠীর দিনে পাওয়া যায়নি!‌ বেশ, না হয় সপ্তমীর দিনই বেরোনো যাক। নাহ, তাও ঠাঁই নেই। রাতের ট্রেনে না হয় নেই। দিনের ট্রেনেই না হয় যাওয়া যাবে। সারাদিনটা না হয় ট্রেনেই কাটবে। সে গুড়েও বালি। সেখানেও অধিকাংশ ভ্রমণার্থীর জন্য রয়েছে প্রত্যাখ্যানের বার্তা।

তাহলে, মোদ্দা কথাটা কী দাঁড়াল?‌ বাঙালি এখনও সেই ভ্রমণপ্রিয় জাতিই থেকে গেছে। সে চার মাস আগে লাইনে দাঁড়ায়। টিকিট না পেলে পরেরদিন আবার দাঁড়ায়। তাও টিকিট না পেলে এজেন্টের শরণাপন্ন হয়। চড়া দাম দিতেও প্রস্তুত থাকে। কিন্তু তারপরও টিকিট পাওয়া যায় না। ভারতের আর কোন জাতি সম্পর্কে এমনটা বলা যায়!

এবার চলুন গুপি গাইন বাঘা বাইনে। সেখানে ভূতের রাজা অনেক শখ করে গুপি–‌বাঘাকে তিনটে বর দিতে চেয়েছিল। গুপি–‌বাঘা চাইলে রাজত্ব, রাজকন্যা, ঐশ্বর্য চেয়ে নিতেই পারত। কিন্তু তারা কী চেয়েছিল?‌ একেবারেই নিরীহ তিনটে বর। ১)‌ যেথা খুশি যাইতে পারি। ২)‌ যা খুশি খাইতে পারে। ৩)‌ মনের সুখে গাইতে পারি। ‌অর্থাৎ, বাঙালি একটু ঘুরতে চায়, একটু ভাল–‌মন্দ খেতে চায় আর একটু গান গাইতে চায়। বড় নিরীহ সেই চাওয়া। তাহলে, বাঙালি প্রথম কী চাইল?‌ একটু ঘুরতে চাইল। অর্থাৎ, জাতিটা বড়ই ভ্রমণপ্রিয়। সেই ট্র‌্যাডিশন বাঙালি আজও বজায় রেখেছে। জীবনের নানা সমস্যা আছে। হাতে যে বিরাট অর্থের সম্ভার, এমনও নয়। কিন্তু তার পরেও যে যার মতো ঘুরতে চায়। আর কোন জাতি এভাবে বেড়াতে চায়!‌ হ্যাঁ, বাঙালির অনেক সমস্যা। অনেক দুর্নাম। কিন্তু এরপরেও বাঙালি পাহাড়, জঙ্গল, সমুদ্রে ছুটে যায়। এই বাঙালির জন্য একটু গর্ব করবেন না!‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.