রক্তিম মিত্র
সিবিআইয়ের চেষ্টার কোনও ত্রুটি নেই। তাঁরা বল নিয়ে ছোটাছুটি করে পেনাল্টি বক্স পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তারপর বল বাইরে মারে।
কারণ, কর্তাদের সেটাই নির্দেশ। আসল লোককে ছোয়া চলবে না। লোক দেখানো দু–এক বার ডাক পাঠাও। ব্যাস, এই পর্যন্ত। এর বেশি যেন বেকায়দায় না ফেলা হয়।
কিন্তু সিবিআই বোধ হয় চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারবে না। কারণ, ভাইপো সেমসাইড গোল করেই চলেছেন। সিবিআই যতই বাঁচানোর চেষ্টা করুক, ভাইপো নিজেই স্বখাতসলিলে ডুবতে মরিয়া। শুধু নিজে ডুববেন না। পিসিকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববেন।
বেরিয়ে এসেই তিনি লম্বা চওড়া ভাষণ ঝাড়েন। আমার বিরুদ্ধে প্রমাণ দেখিয়ে দিক। আমি সিবিআই কে চ্যালেঞ্জ করছি। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করছি, ইত্যাদি ইত্যাদি।
কয়েকদিন আগে সিবিআই জেরা থেকে বেরিয়ে এসে এমন ডায়লগ ঝেড়েছিলেন। ‘নবজোকার’ কর্মসূচিতে গাড়ির ছাদে ওঠে রোজ নিয়ম করে এমন ডায়লগ ঝাড়ছেন। রুজিরাকে ইডি ডেকেছে শুনেই রাতের বেলায় আবার সেই মিডিয়ার সামনে আসা। আবার সেই একই ভাষণের পুনরাবৃত্তি।
যত দিন যাচ্ছে, যুক্তি, বুদ্ধি সব যেন লোপ পেয়ে যাচ্ছে। কাকে আক্রমণ করতে গিয়ে কাকে আক্রমণ করে বসছেন, একবার ভেবেও দেখছেন না। আপাতভাবে মনে হবে, শুভেন্দু অধিকারীর দিকে তোপ দাগছেন। বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাচ্ছেন। চ্যানেলে সেরকমই বলা হচ্ছে। কাগজে সেরকমই বেরোচ্ছে। কিন্তু আসলে, রোজ নিয়ম করে নিজের পিসিকেই অপদার্থ বলে চলেছেন। নিজের পিসির গালেই যেন থাপ্পড় মেরে চলেছেন।
নিয়ম করে তিনি বলে চলেছেন, নারদার ভিডিওতে শুভেন্দু অধিকারীকে হাত পেতে টাকা নিতে দেখা গেছে। তারপরেও বিজেপি তাকে দলে নিয়েছে। বিজেপির কথা ছেড়ে দিন, নারদার সেই ভিডিও সামনে আসে ২০১৬–র এপ্রিলে। তার পরের মাসেই তাঁর পিসি মমতা ব্যানার্জি তাঁকে নিজের মন্ত্রীসভায় নিয়েছিলেন। অর্থাৎ, টাকা নিচ্ছেন দেখার পরেও তাঁকে মন্ত্রী করা হয়। পাঁচবছর তাঁকে তিন খানা দপ্তরের মন্ত্রী রেখে দেওয়া হয়। তাহলে, আঙুলটা কি পিসির দিকেও উঠছে না?
মুখ্যমন্ত্রী তখন তারস্বরে বলেছিলেন, এটা ফেক ভিডিও। তাঁদের বদনাম করার জন্য বানানো হয়েছে। যদিও পরবর্তীকালে দেখা গেছে, ভিডিওটা মোটেই জাল নয়। তাহলে, সেদিন মুখ্যমন্ত্রী না জেনে এমন ডাঁহা মিথ্যের আশ্রয় নিয়েছিলেন কেন? পিসি যাকে ফেক ভিডিও বলেছিলেন, সেই ভিডিও–র ওপর ভিত্তি করে ভাইপো অন্যজনকে আক্রমণ করছেন। তাহলে কে ঠিক, পিসি না ভাইপো? আসলে, ভাইপোও বুঝিয়ে দিলেন, ভিডিওটা সত্যিই ছিল, পিসিই সেদিন মিথ্যে কথা বলেছিলেন। পিসির গালে এ যেন আরেক থাপ্পড়।
এবার আসুন এসএসসি–র প্রশ্নে। ভাইপো রোজ নিয়ম করে বলে যাচ্ছেন, এসএসসি থেকে সবথেকে বেশি টাকা তুলেছেন শুভেন্দু অধিকারী। এমনকী, সিবিআইকেও সেই কথাই জানিয়েছেন। আচ্ছা, এইসব অভিযোগগুলো কোন সময়ের? ভাইপো নিজেই জানিয়েছেন, ২০১৪ থেকে ১৯ পর্যন্ত। আচ্ছা, সেই সময় শুভেন্দু কোন দলে ছিলেন? শুভেন্দু তো শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন না। অর্থাৎ, তাঁর তো প্রত্যক্ষভাবে চাকরি করে দেওয়ার ক্ষমতাও ছিল না। অর্থাৎ, শিক্ষামন্ত্রীর কাছে অথবা দলের কাছে নাম জমা দিতে হয়েছিল। সেই তালিকা অনুমোদিতও হয়েছিল। এসএসসি–র চাকরি। অথচ, তালিকা দিচ্ছেন পরিবহণ মন্ত্রী। আর সেই তালিকায় থাকা সবার চাকরিও হয়ে যাচ্ছে। আসল দায়টা তাহলে কার? পরিবহণমন্ত্রীর দেওয়া তালিকায় শিক্ষা দপ্তরে হাজার হাজার চাকরি হচ্ছে, এটা যদি মুখ্যমন্ত্রী না জানেন, তাহলে কে জানবে?
আর যদি জেনেও কোনও ব্যবস্থা নেননি, তিনটে জেলা শুভেন্দুকেই টাকা তোলার সুযোগ দিয়েছিলেন, তাহলেও কি মুখ্যমন্ত্রীকে দায়ী করা হচ্ছে না? তাঁর মন্ত্রীসভার গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য পাঁচ বছর ধরে হাজার হাজার যোগ্য প্রার্থীকে বঞ্চিত করে টাকার বিনিময়ে ভুয়ো প্রার্থীদের ঢুকিয়েছেন, এটা জানার পরেও পাঁচ বছরে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারলেন না?
আসলে, ভুয়ো ডিগ্রির এই ভুঁইফোড় ভাইপো কাকে আক্রমণ করছেন, নিজেও জানেন না। আক্রমণ করছেন শুভেন্দুকে। কিন্তু প্রতি পদে অপদার্থ বলছেন নিজের পিসিকেই। এমন ভাইপো থাকলে আর বিরোধীর দরকার হয় না। পিসিকে ডোবানোর জন্য এই ভঁুইফোড় ভাইপোই যথেষ্ট।