এই থাপ্পড়টাই ওঁদের প্রাপ্য

রক্তিম মিত্র

তিনি আসবেন। ভেতরে ঘণ্টাখানেক সময় কাটাবেন। বেরিয়ে এসেই একটা লম্বাচওড়া ভাষণ দেবেন। এটাই মোটামুটি পরিচিত চিত্রনাট্য। এবারও তার ব্যতিক্রম হল না।

নবজোয়ারের নামে চলছে মহা এক সার্কাস। সার্কাসে যেমন বিভিন্ন মাঠে তাঁবু পড়ত, এখানেও তেমনি তাঁবু পড়ে। যেন এক রাজসূয় যজ্ঞ। আপাদমস্তক এজেন্সি নিয়ন্ত্রিত একটা সাজানো অনুষ্ঠান। তার নাম নাকি জনসংযোগ। ধারেপাশে সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, জেলার নেতারাই ঘেঁসতে পারছেন না। চতুর্দিকে পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। সেই এক ছবি। তিনি উঠে পড়লেন গাড়ির ছাদে। সেখান থেকে হাত নাড়ছেন। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুও কোনওদিন এভাবে হাত নাড়াতেন কিনা সন্দেহ।

দেখতে দেখতে সত্যিই রাগ হয়। এইসব ছবি কাগজে ছাপা হচ্ছে। এইসব জোকারের মতো কর্মকাণ্ড নিয়ে টিভিতে সন্ধেবেলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা চলছে। এমন এক নিকৃষ্টমানের কর্মসূচি নিয়ে ফলাও প্রচার হচ্ছে। এতে নাকি সংগঠনে নবজোয়ার আসবে, এইসব বলা হচ্ছে। আর সেগুলো আমরা শুনছি।

সবকিছুর প্রমাণ লাগে না। সাদা চোখেই অনেক কিছু বোঝা যায়। যে মানুষটি পাঁচ বছর আগে গোটা রাজ্য জুড়ে পঞ্চায়েত ভোট হতে দিলেন না। রাজ্যের প্রতিটি ব্লক অফিস গুন্ডা দিয়ে ঘিরে দেওয়া হল। পুলিশ আর আস্ত একটা সরকার নির্লজ্জের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল। সেই মানুষটি কিনা বলছে, এবার শান্তিতে ভোট করাতে হবে। ভণ্ডামির তো একটা সীমা থাকে। এই মানুষটি সব সীমাই লঙ্ঘন করেছেন।

এমন কোনও কেলেঙ্কারি নেই, যাঁর সঙ্গে এই লোকটির নাম জড়িয়ে নেই। এবং এর কোনওটাই কুৎসা বা মিথ্যাপ্রচার নয়। সবাই সবকিছু জানে। তার পরেও এই মানুষটি বিশাল পুলিশি কনভয় নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারপরও তাঁকে রক্ষাকবচ দিতে সুপ্রিম কোর্টের কী তৎপরতা। সেই মানুষটিকে সিবিআই ডেকেছে, এমন একটা ইভেন্ট তৈরি করা হল, যেন নেতাজি আসছেন। সিবিআই নামক আস্ত অপদার্থ একটি প্রতিষ্ঠান দিনের শেষে মুষিক প্রসব করবে, সে তো জানাই ছিল। বেরিয়ে আসার পর এই লোকটা এত লম্বা ভাষণ দেওয়ার সাহস পায় কোত্থেকে। কারণ, জানেন তাঁর কিছুই হবে না। জানেন, তাঁকে বাঁচানোর আসল লোকটা দিল্লিতে বসে আছে। যে লোকটা নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য সবকিছু করতে পারে।

তাহলে, সিবিআই কেন ডাকল?‌ নিতান্তই লোক দেখানোর জন্য। দেখো, আমরা তাঁকে ডেকেছি। আর কোর্টকে যেন বলা যায়, আমরা তাঁকে জেরা করেছি। বিশেষ কিছু পাওয়া যায়নি। সিবিআই যদি সত্যিই সক্রিয় হত, এই তদন্ত করতে সাতদিনও লাগত না। যাদের ধরা হয়েছে, তারা নেহাতই চুনোপুটি। আসল মাথা কে, সবাই জানে। তারপরেও তাঁর টিঁকি ছোয়া যাচ্ছে না। একটা সামান্য তদন্তে আর কত সময় লাগে?‌ তদন্তে সময় তখনই লাগে, যখন সেই তদন্তকে ধামাচাপা দিতে হয়। ঠিক সেই কাজটাই করে চলেছে সিবিআই। সারদাতেও তাই। নারদাতেও তাই।

এমন অপদার্থ একটি তদন্তকারি সংস্থা আছে বলেই বছরের পর বছর এই দুর্বৃত্তরা লাগামছাড়া অপরাধ করে যেতে পারে। সেই কারণেই বেরিয়ে এসে এই লম্বা ভাষণ দিতে পারে। নামতে নামতে সিবিআই নিজেদের এমন জায়গায় নামিয়ে এনেছে, এইসব ক্রিমিনালরাও সিবিআই দপ্তরের বাইরে দাঁড়িয়ে সিবিআইকে চমকে যায়।

নরেন্দ্র মোদি বা অমিত শাহরা কতখানি অপদার্থ, ওই ভাষণটাই তার প্রমাণ। হ্যাঁ, এই থাপ্পড়টাই তাঁদের প্রাপ্য।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.