ঈশ্বর গুপ্ত
তখন টিভিতে রাজনৈতিক তরজা চলছিল। হঠাৎ, পর্দায় ভেসে উঠল, সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার প্রয়াত। হ্যাঁ, বয়স হয়েছিল। শারীরিক নানা সমস্যাও ছিল। হাসপাতালে ভর্তিও ছিলেন। তবু এমন একটা খবরের জন্য বাঙালি বোধ হয় প্রস্তুত ছিল না।
কিন্তু এমন একটা খবর যদি হঠাৎ করে এসে যায়, কী আর করা যাবে! এবিপি আনন্দ, যাঁদের আর্কাইভ ঈর্ষণীয়, সেখানেই চোখ রাখা। কিন্তু তাতে বেশ হতাশই হলাম। একই কথার পুনরাবৃত্তি। একে–তাকে ফোনে ধরা। গতানুগতিক শোকপ্রকাশ। কিন্তু এরপরের দু’ঘণ্টা ধরে যা দেখে গেলাম, তাতে রাগ ও বিরক্তি আরও বাড়ল।
আর্কাইভ খুঁজে অবশেষে কিছু একটা পাওয়া গেছে। এবিপি আনন্দের ‘সেরা বাঙালি’ অনুষ্ঠান। সেখানে সমরেশ মজুমদারকে একবার সম্মানিত করা হয়েছিল। পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন জয় গোস্বামী। আর সেই পুরস্কার গ্রহণ করছেন সমরেশ মজুমদার। নানা সময়ে দৃশ্যটা অন্তত বার চল্লিশেক দেখানো হল। যেন সমরেশ মজুমদার নামটার আর কোনও গুরুত্ব নেই। শুধুই এবিপি আনন্দ তাঁকে ‘সেরা বাঙালি’ দিয়ে ধন্য করেছিল। এটাই তাঁর একমাত্র পরিচিতি।
এই হল এবিপি আনন্দের আর্কাইভ। এরকম একজন কিংবদন্তি সাহিত্যিকের কোনও ইন্টারভিউ আর্কাইভে পাওয়া যাচ্ছে না। কখনও কেউ মারা গেলে ফোনে দু–চার লাইনের প্রতিক্রিয়া নেওয়া হয়েছে। কখনও কোনও বিতর্কসভায় পাঁচ মিনিটের বক্তৃতা দিতে ডাকা হয়েছে। এর বাইরে আলাদা করে এই মানুষটার একটা ইন্টারভিউ করি, এমন তাগিদ কখনও দেখা যায়নি। অথচ, শোভন–বৈশাখির নাচের বা খেউড় করার ফুটেজ বলুন, অন্তত একশো খানা ফুটেজ নিমেশে বেরিয়ে যাবে।
শোভন–বৈশাখির শতাধিক ফুটেজ পাওয়া যায়। মদন মিত্রদের ফুটেজ পাওয়া যায়। কিন্তু সমরেশ মজুমদারদের ফুটেজ আর্কাইভ ঘেঁটে পাওয়া যায় না। অথচ, বাংলাদেশের বিভিন্ন চ্যানেলে কিন্তু তাঁর ইন্টারভিউ পাওয়া যাবে। যখনই সেই দেশে গেছেন, সেই দেশের প্রথমসারির চ্যানেলগুলো দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়ে রেখেছে। সেগুলো যত্ন করে পরিবেশন করেছে। আর আমাদের এই বাংলার চ্যানেলে তাঁকে পাওয়া যায় না।
একটা মৃত্যু আমাদের তথাকথিত নিউজ চ্যানেলগুলোর দৈন্যদশা আরও একবার প্রকট করে দিয়ে গেল।