ওপেন ফোরাম
বরুণ সরকার
একটা ভবিষ্যদ্বাণী এখনই করে ফেলা যাক। যে কোনও দিন বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলি বদলি হয়ে যাবেন। হয়ত বলা হবে, আপনাকে অমুক হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি করা হল। তারপর পাঠিয়ে দেওয়া হবে কোনও এক ছোটখাটো রাজ্যে।
এমন ভবিষ্যদ্বাণীর ভিত্তি কী? না, তিথি নক্ষত্র মেনে কুষ্টিবিচারে নয়। সিবিআই তদন্তের গতিপ্রকৃতি যেদিকে এগোচ্ছে, তাতে এটাই ঘটতে চলেছে। আজ না হোক কাল, এমনটা হবেই। হতে বাধ্য। বলা হবে, রুটিন ট্রান্সফার। বলা হবে, প্রমোশন হল। তাঁর বদলি জাস্টিফাই করতে গিয়ে হয়ত আরও কয়েকজনকে এদিক–ওদিক বদলি করতে হবে। মোদ্দা কথা, তাঁকে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে সরানো হবে, এটা নিশ্চিত। যেমনভাবে জগদীপ ধনকড় নামক এক রাজ্যপালকে রাতারাতি উপরাষ্ট্রপতি বানিয়ে কাউকে রিলিফ দেওয়া হল, মনোমতো রাজ্যপাল সাপ্লাই করা হল, সেভাবেই বিচারপতি গাঙ্গুলির প্রমোশন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
সিবিআই নামক বস্তুটিকে যত দেখছি, অপদার্থতার নতুন নতুন সংজ্ঞা খুঁজে পাছি। না, তাঁদের দক্ষতা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তাঁরা চাইলে অনেক কিছুই পারেন। কিন্তু তাঁদের সদিচ্ছা কতখানি, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। আসল কথা হল, তাঁদের যাঁরা চালনা করেন, তাঁদের সদিচ্ছা কতখানি?
সবাই জানেন, শিক্ষায় এই দুর্নীতির মাস্টার মাইন্ড কে। শুধু সিবিআই বা ইডি জানে না। তাই এক বছর গড়িয়ে গেলেও তাঁরা শুধু নিচের দিকের এজেন্ট খুঁজে বেড়াচ্ছেন। আসল মাথার ধারেকাছেও যাওয়ার চেষ্টা করছেন না। সারদা সেই কবেই হিমঘরে চলে গেছে। নারদাও তাই। এই তদন্তও হিমঘরে চলেই যেত। নেহাত বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়দের মতো কিছু মানুষ এখনও রয়ে গেছেন। তাঁদের লাদাতার ধাঁতানি খেয়ে কিছু না করলেই নয়। তাই দু একটা কুন্তল, শান্তনু, অয়ন মার্কা খুচরো আসামীদের নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া করা হচ্ছে।
সহজ কথা, এঁদের এত প্রভাব, এত প্রতিপত্তি আসে কোথা থেকে? জেলার নেতারা তাঁদের ঘাঁটাতে সাহস পান না। জেলার ডিএম, এসপি তাঁদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন করেন। এর পরেও বুঝতে বাকি থাকে, এঁরা কার আশীর্বাদধন্য? কিন্তু সেই মাকাল ফলটির ধারকাছ দিয়েও যেতে পারছে না সিবিআই। বিচারপতি মাঝে মাঝেই অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। ভর্ৎসনা করছেন। কিন্তু কারা সিবিআই বা ইডিকে ‘ধীরে চলো’ বার্তা দিয়েছেন, সেটাও কি বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে!
কোর্টের বিভিন্ন রায় একসময় সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে স্থগিতাদেশ পেয়ে যাচ্ছে। কোথায় কে কলকাঠি নাড়ছেন, আস্তে আস্তে পরিষ্কার হচ্ছে। আবার কখনও রুদ্ধদ্বার বৈঠক হবে। আবার সব হিমঘরে যাবে। মাঝখান থেকে অভিজিৎবাবুদের মতো সৎ বিচারকরা হতাশ হয়ে পড়বেন। এখনও অভিজিৎ গাঙ্গুলির মতো লোকেরা আছেন বলেই কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে। কিন্তু যাঁরা এতটা ক্ষমতাশালী, যাঁরা সিবিআইয়ের গতি শ্লথ করে দিতে পারে, তাঁরা ওপর মহলে একটু তদ্বির করে একজন বিচারপতিকে বদলি করতে পারেন না? এবং, তদন্তকে ঠান্ডা ঘরে পাঠাতে সেটাই হবে শেষ অস্ত্র।