একটা নির্লজ্জ হোর্ডিং কতকিছু বুঝিয়ে দিল

বরুণ সেন

সেদিন গিয়েছিলাম বইমেলায়। এতদিনের অভ্যেস। এখন বয়স বেড়েছে। কর্মক্ষমতা কমেছে। বইমেলা কিছুটা দূরেও সরে গেছে। তবু না গিয়ে পারি না।

ঢোকার মুখেই বেশ কয়েকটা হোর্ডিং দেখে চোখ আটকে গেল। ঠিক দেখছি তো?‌ বইমেলার হোর্ডিংয়ে কিনা মুখ্যমন্ত্রীর ছবির সঙ্গে তাঁর ভাইপোরও ঢাউস ছবি। কোনও সুস্থ রুচির মানুষ এমন ছবি টাঙাতে পারেন!‌

অত্যুৎসাহী মানুষের অভাব নেই। অনেকেই জেনে গেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর ছবি সাঁটিয়ে দিতে পারলে অনেক অপরাধ ঢাকা পড়ে যায়। এখন আবার তাঁর ভাইপোকেও ছবিতে রাখতে হচ্ছে। নইলে, কোনদিক থেকে কার নাম বাদ পড়ে, কে জানে!‌

দলীয় পোস্টার, হোর্ডিং বা ফ্লেক্সে সেই কুখ্যাত ভাইপোর ছবি থাকতেই পারে। এতে আমার বলার কিছুই নেই। কিন্তু এই হোর্ডিংয়ের তলায় মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তীর নাম। অর্থাৎ, তাঁর উদ্যোগে এই ছবি টাঙানো হয়েছে।

সত্যিই খুব রাগ হল। দালালির একটা সীমা থাকবে তো। বিধাননগরের মেয়র বলে কথা। একটা মিনিমাম চক্ষুলজ্জা তো থাকবে। বইমেলার হোর্ডিংয়ে কোন আক্কেলে তিনি অভিষেক ব্যানার্জির ছবি টাঙালেন?‌

মুখ্যমন্ত্রীর ছবি তবু মেনে নেওয়া যায়। হাজার হোক, তিনি রাজ্যের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী। তাই বলে সেই কুখ্যাত ভাইপোকে বইমেলার সরকারি হোর্ডিংয়ে জায়গা দিতে হল!‌ তাও আবার গোটা করুণাময়ী চত্বরজুড়ে!‌

যাঁর ছবি টাঙানো হয়েছে, তাঁকেও বলিহারি। তিনি নাকি সব খবর রাখেন। কোন গ্রামে কে কী করছে, সব নাকি তিনি জানেন। আর গোটা সল্টলেকজুড়ে তাঁর হাজার হাজার হোর্ডিং টাঙানো হল, এটুকু জানেন না!‌ নিজেও তো একবার বলতে পারতেন, প্লিজ, ওই হোর্ডিংয়ে আমার ছবি রাখবেন না। ওখানে আমার ছবি বেমানান।

এই বোধটুকু নেই। তিনি কিনা সাংসদ। কে এইসব অর্বাচীন লোকেদের সাংসদ বানাল!‌

তাঁর নামে অনেক অভিযোগের কথা শোনা যায়। এমন সব মারাত্মক অভিযোগ ইতিপূর্বে বাংলার কোনও রাজনৈতিক নেতার নামে শোনা যায়নি। অভিযোগগুলোর সত্যি মিথ্যে জানি না। তবে কিছু জিনিস তো খোলা চোখে দেখা যায়। সেখান থেকে একটা ধারণা তৈরি হয়। সেই ধারণা থেকেই মনে হয়েছিল, অভিযোগগুলো মিথ্যে নয়। এই ছবি দেখার পর সেই ধারণাই আরও বদ্ধমূল হল।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.