রক্তিম মিত্র
করুণাময়ী চত্বরে গিয়ে চমকে গেলাম। এ কী দেখছি! বইমেলা উপলক্ষ্যে নানা রকম ফ্রেক্স, হোর্ডিং টাঙানো হয়েছে। তাতে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি থাকবে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সেই ছবির সঙ্গে কোথাও বিধায়ক সুজিত বসু বা কোথাও মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তীর ছবি থাকবে, এটাও জানা কথা। কিন্তু এইসব হোর্ডিংয়ে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপোর ছবি।
যদিও তাঁর একটা পোশাকি নাম আছে, অভিষেক ব্যানার্জি। তিনি আবার ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। রাজ্যের শাসক দলের সর্বভারতীয় সম্পাদক। কিন্তু সবিনয়ে জানতে ইচ্ছে করে, বইমেলার সঙ্গে তাঁর কী সম্পর্ক? বিধান নগরের মেয়রকে কেন সবার ওপরে সেই কুখ্যাত ভাইপোর হোর্ডিং টাঙালেন? তোয়াজ করার একটা সীমা থাকবে তো।
তিনি ব্যক্তিগতভাবে এই ভাইপোকে তোল্লাই দিতেই পারেন। নিজের বাড়িতে বড় কাট আউট লাগান, আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু এই হোর্ডিংগুলোর তলায় তাঁর পরিচয় হিসেবে লেখা হয়েছে বিধাননগরের মেয়র। নিশ্চিতভাবেই এগুলো সরকারি টাকাতেই লাগানো হয়েছে। আর যদি দলীয় উদ্যোগেও হয়ে থাকে, তাহলে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, ওই হোর্ডিংয়ের জন্য কর্পোরেশনে কোনও রাজস্ব জমা হয়নি। একেবারে বেআইনিভাবে টাঙানো হয়েছে।
বইমেলার হোর্ডিংয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপোর ছবি বেমানান, এই ন্যুনতম বোধটুকু যাঁর নেই, তিনি কিনা বিধান নগরের মেয়র! তাঁর ওপর বইমেলা আয়োজনের দায়িত্ব! যিনি দায়িত্ব দিয়েছেন, তাঁর দায়িত্ববোধ আরও সাঙ্ঘাতিক। তিনি বইমেলা উদ্বোধন করবেন বলে ক্যাবিনেট মিটিংকে নিয়ে এলেন সল্টলেকের উন্নয়ন ভবনে। এখানেই শেষ নয়, বানানো হল হেলিপ্যাড। যেন উদ্বোধনের পরই দ্রুত হেলিকপ্টারে উড়ে যেতে পারেন।
আগে বইমেলার উদ্বোধন করতেন দিকপাল সাহিত্যিকরা। এখন সেসব পাঠ উঠেই গেছে। তিনি থাকতে অন্য কেউ উদ্বোধন করবেন, হতে পারে! বইমেলার উদ্বোধনী মঞ্চেই তাঁর লেখা বইয়ের উদ্বোধনও হয়ে আসছে বহু বছর ধরে। তিনি কত বড় মাপের সাহিত্যিক, এই মঞ্চ থেকেই তার নির্লজ্জ বিজ্ঞাপন চলে। এবার একটা অভিনব কাণ্ড ঘটল। বইমেলা উদ্বোধনের আগেই তিনি দলীয় মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’র স্টল উদ্বোধন করে ফেললেন। ভাবা যায়! আগে ‘জাগো বাংলা’র উদ্বোধন, তারপর বইমেলার উদ্বোধন! বইমেলা আগে উদ্বোধন করার পর নিজের দলীয় স্টল উদ্বোধন করা যেত না? কোনটা আগে করতে হয়, কোনটা পরে, এই ন্যূনতম শালীনতার বোধটুকু নেই! তিনি কিনা বইমেলার উদ্বোধন করেন!
যেমন রাজা, তেমনই পারিষদ। শুধু শুধু বিধান নগরের মেয়রকে দোষ দিয়ে আর লাভ কী? তিনি যেখান থেকে শেখান, সেখান থেকেই শিখছেন।
সত্যিই, ‘অনুপ্রেরণা’ বড় ভয়ঙ্কর জিনিস।