বেঙ্গল টাইমস প্রতিবেদন: গত কয়েক বছরে এই রাজ্যে শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনা কম ঘটেনি। উপাচার্য ঘেরাও, হুমকি দেওয়া, শিক্ষকদের নামে মিথ্যে মামলা দেওয়া, জেলে ভরা, দেদার টুকলি, ফেল করা ছাত্রদের পাস করানোর হুমকি, কোনওকিছুই বাদ ছিল না। কিন্তু তার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে এত তৎপর হতে কেউ দেখেছেন ?
উত্তরপাড়ার সেই আক্রান্ত অধ্যাপককে মুখ্যমন্ত্রী নিজে ফোন করলেন। পাঠালেন দলের জেলা সভাপতি ও স্থানীয় বিধায়ককে। তাঁরা গিয়ে ক্ষমা চাইলেন। দুই ছাত্রকে গ্রেপ্তার। অভিযুক্ত কাউন্সিলরকে শো কজ। এমন তৎপরতা এর আগে কখনই দেখা যায়নি।
তবু ভাল। ভালর ভানটাও ভাল। নিশ্চিতভাবেই এমন নমনীয়তার পেছনে প্রশান্ত কিশোরের কিছুটা হলেও ভূমিকা আছে। এর আগে কখনই মুখ্যমন্ত্রীকে বা প্রশাসনকে এমন সদর্থক ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। অনেকে বলতেই পারেন, লোকসভা ভোটে হারের পর বোধোদয় হয়েছে।অনেকে এর পেছনে প্রশান্তি কিশোরের বুদ্ধি খুঁজে পাবেন। যদি তাই হয়, তবে মন্দ কী?
একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে নেত্রী যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তাতে প্রশান্ত কিশোরের কতটুকুই বা ছোঁয়া ছিল! থাকলে এমন আবোল তাবোল বকতে পারতেন না। হ্যাঁ, চণ্ডীপাঠ, কালীমন্ত্র এগুলো কমেছে। কিন্তু বাদবাকি হাস্যকর সব উপাদানই প্রায় বজায় ছিল। এই যে বনগাঁ পুরসভার অনাস্থাকে নিয়ে এমন কাণ্ড, নিশ্চয় এটা প্রশান্ত কিশোরের প্রেসক্রিপশন ছিল না। হাইকোর্টে বিচারপতির এ্জলাস বয়কট। এগুলো নিশ্চয় প্রশান্তর দাওয়াই ছিল না। অর্থাৎ, নেত্রী আছেন নেত্রীতেই। আবার প্রশাসনিক বৈঠক শুরু হচ্ছে। আবার সেই একইরকম সার্কাস শুরু হবে। এগুলো প্রশান্ত কতটাই বা রুখতে পারবেন! তাই যদি এক্ষেত্রে প্রশান্ত কিশোরের কথা শুনে থাকেন, ভালই করেছেন।
অনেক আগে থেকেই শিক্ষক নিগ্রহ, অধ্যাপক নিগ্রহ এসব চলে আসছে। অধিকাংশ ঘটনায় যুক্ত শাসকদলের লোকজন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের ভূমিকা ছিল খুবই ন্যক্কারজনক। তাঁরা জানতেন, কিছু করা চলবে না। আর নেতা মন্ত্রীরাও জানতেন, মুখ্যমন্ত্রী খুশি হবেন, এমন কথাই বলতে হবে। তাই, তাঁরা আড়াল করার চেষ্টা চালাতেন। কখনও কখনও যাঁরা আক্রান্ত, তাঁদের নামেই কুৎসা করতেন। ভুল স্বীকার বা ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা, সরকার যে অপরাধীর পক্ষে, এই বার্তাটাই বারেবারে প্রকট হয়েছে। কখনও কখনও শিক্ষামন্ত্রী ফাঁপা হুমকি দিয়েছেন, কড়া হাতে দমন করা হবে। কিন্তু ওই হুমকির যে কোনও সারবত্তা নেই, তা আক্রান্ত ও আক্রমনকারী, দুজনেই জানেন।
উত্তরপাড়ার ঘটনা অনেকটাই ব্যতিক্রমী। এই শিক্ষককে মাওবাদী বা সিপিএম বা বিজেপি হিসেবে দেগে দেওয়া হয়নি। বিরোধীদের চক্রান্ত বলা হয়নি। প্রশাসনের যা যা করা দরকার, ঠিক সেটাই করা হয়েছে। এই ভূমিকা সত্যিই প্রশংসনীয়। সরকারকে, শাসক দলকে মানুষ এমন ভূমিকাতেই দেখতে চায়। কোথাও কোথাও কিছু কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে। কিন্তু সরকার কঠোর থাকলে, এই প্রবণতা কমানো যায়। আর সরকার যদি অপরাধীর পক্ষ নেয়, তাহলে দুষ্কৃতীরাই আস্কারা পায়। এই ঘটনা কিছুটা হলেও বার্তা দিয়ে গেল।
ধন্যবাদ প্রশান্ত কিশোর। এতদিন যখন এসব হয়নি, তখন ধরে নেওয়া যায়, এটা আপনার বুদ্ধি। জানি না, কতদিন বুদ্ধি জোগানোর সুযোগ হবে। তবু যতদিন আপনার চাকরি আছে, এমন ইতিবাচক কিছু ছাপ রেখে যান। তাতে এই রাজ্যে শিক্ষার পরিবেশটা যদি একটু হলেও শোধরায়!