ধীমান সাহা
গত একমাসের বেশি সময় ধরে রাজ্য রাজনীতিতে একটা কথা খুব চলছে। ডিসেম্বর ধামাকা। ডিসেম্বরে ঠিক কী হবে, তা নিয়ে অনেকেরই কৌতূহল।
শুভেন্দু অধিকারী মাঝে মাঝেই এই হুঙ্কার দিয়ে চলেছেন। ফলে, কৌতূহল আরও কিছুটা বেড়েছে। তৃণমূল বিরোধী অনেকেই মনে করছেন, এবার নিশ্চয় কিছু একটা হবে। বড় কিছু। যা রাজ্য রাজনীতিতে আলোড়ন ফেলে দেবে। শুভেন্দু হয়ত অতি উৎসাহে এমনটা বলে ফেলেছেন। কিন্তু এখন তিনিও বুঝতে পারছেন, বিশেষ কিছুই হওয়ার নয়। তাই ডিসেম্বরকে পিছিয়ে নিয়ে গেলেন জানুয়ারিতে। এবং দেখা যাবে, এই জানুয়ারিও শীতঘুমেই যাবে।
একটা সময় দিলীপ ঘোষ মাঝে মাঝেই হুঙ্কার দিতেন। কিন্তু তিনি ঠকে শিখেছেন। তিনি অন্তত এটুকু বুঝেছেন, তাঁরা যতই আন্তরিকভাবে লড়াই করুন, দিদিমণির মাথার ওপর যতক্ষণ পর্যন্ত মোদিবাবুদের আশীর্বাদের হাত থাকবে, ততক্ষণ কিছুই হওয়ার নয়। যতই সিবিআই হোক, যতই ইডি হোক। অন্য রাজ্যের বিরোধীদের টাইট দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের যে ভূমিকা, তৃণমূলের ক্ষেত্রে ঠিক উল্টো ভূমিকা। এখানে সময় নষ্ট করার জন্য যা যা করা দরকার, কেন্দ্রীয় এজেন্সি ঠিক তাই তাই করবে।
পার্থ চ্যাটার্জির বাড়িতে কী কী পাওয়া গেল, কোথায় কোথায় বেনামি সম্পত্তি এগুলো সামনে আসতে দুদিনও সময় লাগল না। এমনকী মানিক ভট্টাচার্য কার কার কাছ থেকে টাকা তুলতেন, সেগুলোও সামনে এসে গেল। কিন্তু তাঁদের কাছ থেকে সেই টাকা কোন প্রভাবশালীর কাছে যেত, তা নিয়ে আর কিছুই বেরিয়ে এল না। পার্থ বা মানিক কারও নির্দেশ ছাড়াই, কারও এমন কাজ বছরের পর বছর চালিয়ে গেছেন, এটা বিশ্বাস করতে হবে? এঁদের কাছে যে টাকা পাওয়া গেছে, তা নেহাতই সামান্য, হয়ত পাঁচ পার্সেন্টও নয়। আসল টাকা কোথায় গেছে, সবাই জানে, শুধু সিবিআই জানে না।
পার্থ বা মানিক যেমন নিতান্তই আজ্ঞাবহ দাস, তেমনই সিবিআইয়ের এই আধিকারিকরাও আজ্ঞাবহ দাস। কার নির্দেশে তাঁরা সারা বছর শীতঘুমে থাকেন, এই সত্যিটা জলের মতো পরিষ্কার। এই সহজ সত্যিটা দিলীপ ঘোষ এতদিনে বুঝে গেছেন। কিন্তু শুভেন্দু হয়ত বুঝে উঠতে পারেননি। সেই কারণেই হুঙ্কার দিয়েও এখন পিছিয়ে আসা ছাড়া উপায় নেই।
ডিসেম্বরের আগেই লিখেছিলাম, এই ডিসেম্বর ধামাকা আসলে পর্বতের মূষিকপ্রসব ছাড়া আর কিছুই নয়। মাস শেষ হতে চলল। দেখা যাচ্ছে, মূষিকটুকুও নেই। প্রায় ছারপোকা প্রসবের মতো ব্যাপার। এবং জানুয়ারিতেও বিশেষ কিছুই হওয়ার নয়। হওয়ার হলে সারদা মামলা সাত বছর ধরে এভাবে ঝুলে থাকত না। জনগণের ট্যাক্সির টাকায় তদন্তের নামে যাঁরা এই ভাঁড়ামি করে চলেছেন, এখন সময় এসেছে তাঁদের শাস্তির দাবি তোলার। একদিন শুভেন্দুর মুখে নিশ্চিতভাবেই এমন দাবি উঠে আসবে।