প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়ার তিনি কে?‌

ধীমান সাহা

তিনিই নম্বর টু। তাঁর কথাতেই চলবে দল। তাঁর কথাতেই চলবে প্রশাসন। এই সারসত্যটা তিনি নিজে বেশ ভালই বুঝেছেন। এই সারসত্যটা বুঝিয়ে দিতেও চেষ্টার কোনও কসুর করছেন না। কৃষ্ণনগরের সভায় গিয়ে সেটাই আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন।

সভামঞ্চ থেকেই তিনি ঘোষণা করে দিলেন অমুক অঞ্চলের প্রধানকে সরে যেতে হবে। দল থেকে তাঁকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিচ্ছি। নইলে প্রশাসনকে বলব ব্যবস্থা নিতে। চারিদিকে ধন্যধন্য রব উঠে গেল। ‘‌দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া বার্তা’‌ এই মর্মে প্রচার শুরু হয়ে গেল। চাটুকাররা এতে ধন্য ধন্য করতেই পারেন। মূলস্রোত মিডিয়াও সামিল হয়ে গেল সেই কোরাসে।

‌কোনটা কোন মঞ্চে বলতে হয়, কোনটা কোন মঞ্চে বলতে নেই। এই ন্যূনতম শিক্ষাটা রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর নেই। এবং বলাই বাহুল্য, তাঁর গুণধর ভাইপোরও নেই। ক্ষমতার দম্ভ আর ঔদ্ধত্য চরমে পৌঁছে গেলে, যা হয়, তাই হচ্ছে।

১)‌ তিনি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তিনি কিনা একজন প্রধানকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিলেন। এই নির্দেশ একজন ব্লক সভাপতি দিতে পারতেন। জেলা সভাপতি দিতে পারতেন। তার জায়গায় কিনা সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে দিতে হচ্ছে।
২)‌ নির্দেশটা মঞ্চ থেকে না দিয়ে দলীয়ভাবে দেওয়া যেত। কিন্তু পিসির মতো তাঁকেও গ্যালারি শো করতেই হবে। নইলে বোঝানো যাবে না আমি কতবড় হনু।
৩)‌ প্রধানকে কে নির্বাচিত করেন?‌ পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সদস্যরা। সরাতেও পারেন তাঁরাই। সেখানে একজন ভুঁইফোড় এসে এভাবে প্রকাশ্যে নির্দেশ দিতে পারেন?‌
৪)‌ প্রশানসকে বলব ব্যবস্থা নিতে। মাঝে মাঝেই তিনি এমন হুঙ্কার দিয়ে থাকেন। কেউ প্রশ্ন করে না, প্রশাসনের আপনি কে?‌ আপনার কথা কেন প্রশাসন শুনবে?‌ নিজের সংসদীয় এলাকা হলে তবু না হয় কথা ছিল। কিন্তু কোথায় নদিয়া জেলার প্রশাসনকে তিনি নির্দেশ দেওয়ার কে?‌

ডিএম, এসপিরা দাঁত কেলিয়ে এইসব ভাষণ শোনেন। এই সভা সফল করতে প্রশাসনের কোন স্তর থেকে কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তা সহজেই অনুমেয়। অধিকাংশ সভার মতো এই সভাতেও লোক জড়ো করতে নির্লজ্জভাবেই কাজে লাগানো হয়েছে প্রশাসনকে। সর্বোচ্চ আধিকারিকদের কতবার যে মঞ্চ ও এলাকা পরিদর্শন করে যেতে হয়েছে, তাঁরাই জানেন। এই চাটুকারিতা করতে করত নিজেদের কোথায় নামাচ্ছেন এই পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা। তাই এই ভুঁইফোড়রা এসে বলার সাহস পায়, প্রশাসনকে বলব ব্যবস্থা নিতে।

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.