সোহম সেন
একেকটা বিশ্বকাপ আসে। আমাদের কতকিছু শিখিয়ে দিয়ে যায়। ফুটবলারদের কাছে শিক্ষাটা একরকম। কোচেদের কাছে আরেকরকম। কর্তাদের কাছে অন্যরকম।
কোচেদের একটা থাকে স্ট্যাটেজির দিক। আরেকটা হল কঠিন সিদ্ধান্তের দিক। পর্তুগালের কোচ স্যান্টোসকে দেখে সত্যিই আমি মুগ্ধ। যে সাহসিকতার পরিচয় দিলেন, তা কোচেদের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। কোচের সঙ্গে খেলোয়াড়দের ঠান্ডা লড়াই অনেক সময়ই দেখা যায়। কিন্তু কোচেরা সচরাচর তারকা ফুটবলারদের ঘাঁটানোর পথে হাঁটেন না। তাঁদের অনেক কিছু ইচ্ছে না থাকলেও হজম করে নেন।
দলে রোনাল্ডোর মতো মহাতারকা। এ এই নিয়ে পাঁচবার বিশ্বকাপ খেলছে। যে পাঁচবার ব্যালন ডিওর পেয়েছে। যার এটাই শেষ বিশ্বকাপ। নকআউট পর্বের লড়াইয়ে কিনা সেই রোনাল্ডোকে বসিয়ে দিলেন রিজার্ভ বেঞ্চে। নামিয়ে দিলেন এমন একজনকে যে দেশের হয়ে এখনও পর্যন্ত এক ঘণ্টাও খেলেনি। আর সেই নবাগত তরুণ তুর্কি র্যামোসই কিনা হ্যাটট্রিক করে বসল! রোনাল্ডোকে গোমড়ামুখে রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে তা দেখতে হল!
দল দু–তিন গোলে এগিয়ে গেলে অনেক সময় তারকাদের তুলে নেওয়া হয়। কিছুটা বিশ্রাম দেওয়ার জন্য। আর কিছুটা অন্যদের বাজিয়ে নেওয়ার জন্য। গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচেও শেষদিকে রোনাল্ডোকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। খুবই স্বাভাবিক একটা ঘটনা। কিন্তু রোনাল্ডো ব্যাপারটা মানতে পারেনি। প্রকাশ্যেই অসন্তোষ জানিয়েছিল।
কোচের সামনে দুটো বিকল্প ছিল। এক, যেমনভাবে, যে গরু দুধ দেয়, তার লাথি হজম করতে হয়। অর্থাৎ, রোনাল্ডোকে এগিয়ে দেওয়া। দুই, রোনাল্ডোকে একটা কড়া বার্তা দেওয়া। বুঝিয়ে দেওয়া যে, তুমি অপরিহার্য নও। আমার কাছে তোমার বিকল্প আছে।
অন্য কোচেরা হয়ত প্রথমটাই করতেন। কারণ, মহাতারকাকে বসানোর ঝক্কি অনেক। হারলে পুরো দায়টাই এসে পড়বে কোচের ঘাড়ে। বরং মহাতারকা খেললে কোচের চাকরি নিরাপদ। কারণ, পর্তুগাল হারলে তখন দোষটা এসে পড়বে রোনাল্ডোর ঘাড়েই। সবাই বলবে, রোনাল্ডো জেতাতে পারলেন না। কেউ বলবেন না, কোচের জন্য হারতে হল। কিন্তু রোনাল্ডো মাঠের বাইরে, এই অবস্থায় দল হারলে পুরো দায়িত্ব কোচের। তখন কেউ বলবে না তিনি তরুণদের সুযোগ দিয়েছিলেন।
এত ঝুঁকি নিয়েও স্যান্টোস কিন্তু দ্বিতীয় পথটাই বেছে নিলেন। অর্থাৎ, রোনাল্ডোকে প্রথম দলে রাখলেন না। নতুন এক তারকার জন্ম হল। অন্যদিকে, রোনাল্ডোর কাছেও কড়া একটা বার্তা গেল। কোয়ার্টার ফাইনালে হয়ত আবার রোনাল্ডোকেই নামাবেন। কিন্তু প্রয়োজনে তাঁকে ছাড়াও দল নামাতে পারেন, এটা সারা বিশ্বকে বুঝিয়ে দিলেন।
আমাদের কোচেরাও যদি এতখানি সাহস দেখাতে পারতেন!