সরোজ চক্রবর্তী
একেবারে শুরুতেই ছিটকে গেলেন নেইমার। না, বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেলেন, এমনটা নয়। নকআউট পর্বে আবার ফিরে আসবেন, এমনটাই শোনা যাচ্ছে। তবু গোড়ালির চোট সারিয়ে এত দ্রুত আবার সেই চেনা ছন্দে ফিরতে পারবেন তো? সংশয় কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।
চোটের তালিকায় দানিলো, অ্যালেক্স সান্দ্রোর মতো খেলোয়াড়ও আছেন। তাঁদেরওও হয়ত নকআউট পর্বে পাওয়া যাবে। কিন্তু শেষ ম্যাচে চোট পেলেন অ্যালেক্স টেলেস ও গাব্রিয়েল জেসুস। এই দুজন একেবারে বিশ্বকাপ থেকেই ছিটকে গেলেন।
মোদ্দা কথা, প্রথম তিন ম্যাচেই পাঁচজন চোটের তালিকায়। ব্রাজিল কোচকে চিন্তায় ফেলার পক্ষে যথেষ্ট। কিন্তু তারপরেও ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে তাঁর কৌশল মানতে পারছি না। আগের দুই ম্যাচে জেতায় ব্রাজিলের শেষ শোলোয় যাওয়া নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। সেই কারণেই তিনি হয়ত বিশেষ ঝুঁকি নিতে চাননি। তাছাড়া, রিজার্ভ বেঞ্চকে কিছুটা পরখ করে দেখে নিতে চেয়েছিলেন।
একজন কোচ কয়েকজন ফুটবলারকে বিশ্রাম দিতেই পারেন। সেইসঙ্গে রিজার্ভ বেঞ্চের কয়েকজনকে পরীক্ষাও করে নিতে পারেন। সুবিধাজনক জায়গায় থাকলে সব কোচই এমনটা করে থাকেন। তাই বলে দলের খোলনোলচে আমূল পাল্টে ফেলতে হবে! তাও আবার বিশ্বকাপের মতো আসরে! প্রথম দলের ৯ জনকে বাইরে রেখে টিম নামালেন ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে। এমনিতেই এবারের বিশ্বকাপ অঘটনে ভরা। সৌদি আরব হারিয়ে দিচ্ছে আর্জেন্টিনাকে। জাপান হারিয়ে দিচ্ছে জার্মানি ও স্পেনের মতো দলকে। কাউকেই এখন ছোট করে দেখার উপায় নেই। তাহলেই ঠকতে হবে। তারপরেও ব্রাজিল এমন ঝুঁকি নেওয়ার বিলাসিত দেখালেন! বিশ্বকাপ যে ঢালাও পরীক্ষা নিরীক্ষার মঞ্চ নয়, এই সহজ সত্যিটা ব্রাজিল কোচ বুঝবেন না!
মানছি, এই ম্যাচে হারলেও প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে যেতে সমস্যা হত না। কিন্তু এ তো হারকে আমন্ত্রণ জানানো। অঙ্কের হিসেবে প্রি কোয়ার্টারে চলে গেল ঠিকই, কিন্তু ক্যামেরুনের কাছে হারতে হল, এই লজ্জার রেকর্ড কিন্তু চিরকাল থেকেই যাবে। সেই নব্বইয়ে আর্জেন্টিনাকে হারিয়েছিল ক্যামেরুন। এই বিশ্বকাপেও কতবার সেই উদাহরণ টেনে আনা হল, তার কোনও হিসেব নেই। অর্থাৎ, ৩২ বছর আগের সেই হার যেন আজও লজ্জার অতীত হয়ে তাড়া করছে আর্জেন্টিনাকে। এই প্রথম আফ্রিকার কোনও দেশ হারিয়ে দিল ব্রাজিলকে। এই উদাহরণ আগামী ২০ বছর পরেও ঘুরে ফিরে আসবে। সেটা ব্রাজিলের পক্ষে খুব সম্মানজনক হবে? কেন সেই পরিস্থিতি ডেকে আনতে গেলেন টিটে?
আরও একটা পরিসংখ্যান তুলে ধরা যাক। ব্রাজিল এ পর্যন্ত পাঁচবার বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এই পাঁচবারই কিন্তু গ্রুপ লিগে একটি ম্যাচও হারতে হয়নি। আপাতভাবে মনে হতেই পারে, পরের রাউন্ডে সম্পূর্ণ অন্য লড়াই, এই হারের কোনও প্রভাব পড়বে না। ব্রাজিল কোচ হয়ত এমন যুক্তিই দেবেন। কিন্তু একটা হ্যাংওভার, একটা রেশ কিন্তু থেকেই যায়। টানা জয়ের মাঝে হঠাৎ একটা হার ছন্দপতন ঘটাতেই পারে। আগের ম্যাচে হেরেছি, এই ভাবনাটা ঝেড়ে ফেলা খুব সহজ নয়। ব্রাজিল কোচ কেন যে এমন পরিস্থিতি ডেকে আনলেন!