চিত্রনাট্য মিলে যাচ্ছে, এবারও চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান!‌

অভিজিৎ মুখার্জি

তিন দশক আগের কথা। আমরা তখন নিতান্তই কৈশোরে। তখনও হানা দেয়নি কেবল টিভি। ভরসা বলতে দূরদর্শন। সেই টিভিও তখন ঘরে ঘরে পৌঁছয়নি। কোনও একজনের বাড়িতে পাড়াপড়শিরা একসঙ্গে বসে দেখতে।

সেখানেই দেখানো হয় বিশ্বকাপ। ফুটবল হত রাতের দিকে। আর ক্রিকেট মানে দিনেরবেলা। সেবার খেলা ছিল অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডে। ফলে, ভোর রাত থেকে শুরু হয়ে যেত খেলা। আর নিউজিল্যান্ডে হলে তো মাঝরাতে।

সেবার বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল ভারত। মনে আছে শচীনের দুরন্ত ব্যাটিং। কিরণ মোরে পেছন থেকে কী বলছিলেন কে জানে। হঠাৎ জাভেদ মিয়াঁদাদ দেখলাম ব্যাঙের মতো লাফাচ্ছেন। দৃশ্যটা এখনও মনে আছে। সেবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাত্র ৭৪ রানে অল আউট হয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। হার নিশ্চিত। হঠাৎ শুনলাম, প্রবল বৃষ্টি নেমেছে। মানে, খেলা পণ্ড। পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়ে গেল।

যে ভারত অনায়াসে হারাল পাকিস্তানকে, তারা কিনা শেষ চারে উঠতেই পারল না!‌ আর যে পাকিস্তান শুরু থেকেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটল, সে পৌঁছে গেল সেমিফাইনালে!‌ এখানেই শেষ নয়। সেমিফাইনালে তারা হারাল টুর্নামেন্টের সবথেকে ধারাবাহিক দল নিউজিল্যান্ডকে। ফাইনালে সামনে ইংল্যান্ড। এবার কী হবে?‌ দেখা গেল, ফাইনালে ইংল্যান্ডকেও হারিয়ে দিল পাকিস্তান। সত্যিই যেন এক রূপকথার জয়।

এত বছর পেরিয়ে গেল। কিন্তু এখনও দৃশ্যগুলো যেন চোখের সামনে ভাসছে। কেন জানি না, তিরিশ বছর পর সেই ঘটনার সঙ্গে অনেকটা মিল পাচ্ছি। সেবারও পাকিস্তান কোনওরকমে সেমিফাইনালে উঠেছিল। এবারও তাই। সেবারও সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছিল। এবারও তাই। ঘটনাচক্রে এবারও সামনে সেই ইংল্যান্ড। সেবারও ফাইনাল হয়েছিল মেলসবোর্নে। এবারও তাই।

হতেই পারে কাকতালীয়। তাই বলে এত কিছু মিলে যাবে!‌ যেন সেই চেনা চিত্রনাট্য। ফাইনালে কী হবে?‌ ক্রিকেট মহান অনিশ্চয়তার খেলা। আর টি২০ হলে তো কথাই নেই। তবু কেন জানি না, মনে হচ্ছে, এবারও শেষ হাসি হাসবে সেই পাকিস্তানই। এতকিছু যখন মিলে যাচ্ছে, তখন এই মিলটুকুই বা বাকি থাকে কেন?‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.