সরল বিশ্বাস
একদল যোগ্য প্রার্থী নাহ্য দাবি নিয়ে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে ধর্নায় বসে আছে। তাঁদের প্রতি সরকারের অবস্থান কী? কখনও পুলিশ দিয়ে তুলে দেওয়া হচ্ছে। কখনও তাঁরা যেন খাবার জলটুকুও না পায়, তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। কখনও তাঁদের সাদা পর্দা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে। নানা ভাবে প্রলুব্ধ করে তাদের মধ্যে বিভাজন আনা হচ্ছে। কখনও পর্ষদকে কাজে লাগিয়ে উল্টোপাল্টা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।
অথচ, বেআইনি নিয়োগের জন্য যাঁদের চাকরি নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে, তাঁদের প্রতি সরকারের অবস্থান কী? খোদ বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বস্ত করছেন। কোর্টে দাঁড়িয়ে তাঁদের পক্ষে সওয়াল করছেন। স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলন করে বলছেন, তাঁদের অবৈধ নিয়োগ বৈধ করার জন্য সরকার তাঁদের পাশে আছে।
দ্বিতীয় শ্রেণির প্রতি সরকারের এত দরদ কেন? আসলে, আরও বড় কেলেঙ্কারি না সামনে চলে আসে, সেই কারণেই এই লোকদেখানো দরদ দেখানো হচ্ছে। ধরা যাক, রাম এলাকার কাউকে টাকা দিয়েছেন। পরীক্ষায় সাদা খাতা দিয়ে নিয়োগপত্র পেয়েছেন। কেউ কেউ আবার পরীক্ষা না দিয়েও নিয়োগপত্র পেয়েছেন। চাচ বছর, পাঁচ বছর ধরে মোটা অঙ্কের মাইনেও পেয়েছেন।
কারও চাকরি যাক, এটা কাম্য নয়। কিন্তু ধরা যাক, কোর্টের রায়ে রামের চাকরি গেল। রাম তাহলে কী করবেন? যাবেন এলাকার সেই মাতব্বরের কাছে। মাতব্বরই বা কীভাবে টাকা ফেরাবেন? তিনি আর কতটুকুই বা ভাগ পেয়েছেন? দশ লাখ তোলা হলে তিনি হয়ত পেয়েছেন এক লাখ। বাকি ন লাখ তো গেছে সিঁড়ি বেয়ে অনেক উপরের তলায়।
রামকে নিয়ে তেমন ভয় নেই। কারণ, রামের দৌড় ওই মাতব্বর পর্যন্ত। কিন্তু সেই মাতব্বর তো তাঁর উপরের লোকেদের নাম বলে ফেলবেন। এভাবে সবাই যদি উপরের লোকটার নাম বলতে শুরু করেন, তাহলে তো তা অনেক উপর পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। তখন মনে হবে, পার্থ–মানিক নেহাতই শিশু। এঁরাও আসলে খুচরো খদ্দের।
তাই যেভাবেই হোক, রামকে আটকাও। সে যেন মাতব্বরের কাছে না যায়। মাতব্বর যেন আরও বড় মাতব্বরদের নাম বলে না বসে। ব্যাপারটা পার্থ–মানিকদের ওপর দিয়ে যাচ্ছে। সেটাই ভাল। কেন পুলিশি কনভয়ে করে কোটি কোটি করে টাকা আসত, সেসব নিয়ে যেন হইচই না হয়।
একটা সরকারের কাণ্ড কারখানা দেখে সত্যিই অবাক হতে হয়। কাদের হাতে চলছে এই সরকার? খুচরো দুর্নীতি সব আমলেই কম বেশি হয়। কিন্তু এমন সংগঠিত অপরাধ চলছে সর্বোচ্চ পর্যায়ে! তাও পুলিশি নিরাপত্তায়! এর পরেও পুলিশ মন্ত্রী বলেন, তিনি কিছুই জানতেন না।
সবকিছুই আমাদের কেমন গা সওয়া হয়ে গেছে। এরপরেও আমরা কী নির্লিপ্ত হয়ে সিরিয়াল দেখি। এরপরেও প্রথম পাতায় এইসব জালিয়াতদের ভাষণ ছাপা হয়। ছবি ছাপা হয়। এরপরেও কেউ কেউ দেখানোর চেষ্টা করেন, এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা, নেত্রী খুব কঠোর। এরপরেও তাঁর মিথ্যের বেসাতির লাইভ টেলিকাস্ট হয়।
মাঝে মাঝে মনে হয়, যা হয়েছে, ঠিকই হয়েছে। আমরা এই প্রতারণারই যোগ্য। আমাদের যেমন সরকার প্রাপ্য, আমরা ঠিক তেমন সরকারই পেয়েছি।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, আপনার দল শূন্যেই থাকুক। আপনার মতো মানুষকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পাব, সেই যোগ্যতা এই বাঙালির নেই।