নির্মল দত্ত
ঠিক দশ বছর আগের কথা। দুই এম আর দুই কে–র কাহিনী। দুই এম হলেন মমতা ও মুলায়ম। দুই কে হলেন কুণাল ঘোষ ও কিরণময় নন্দ।
তাহলে একটু পেছন ফিরে তাকানো যাক। তখন ইউপিএ টু সরকার। তৃণমূল সেই সরকারের শরিক। রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা হল প্রণব মুখার্জির নাম।
ইউপিএ–র প্রায় সব শরিকই সমর্থন জানাল। এমনকী যাঁরা ইউপিএ–র বাইরে, সেই বামেরাও দ্বিধাহীনভাবে সমর্থন জানাল। এনডিএ–তে থাকা কিছু দলও সমর্থন জানাল। কিন্তু বেঁকে বসলেন দুই ‘ম’। অর্থাৎ মমতা ও মুলায়ম।
এই দুজনের বৈঠক হয়েছিল দুই কে–র মধ্যস্থতায়। একজন কে হলেন কুণাল ঘোষ। তিনি তখন মুখ্যমন্ত্রীর সবথেকে কাছের মানুষ। অন্য ‘কে’ মানে কিরণময় নন্দ। তখন তিনি সমাজবাদি পার্টির রাজ্যসভার সাংসদ। মিটিংয়ে মমতা–মুলায়ম জানিয়ে দিলেন, তাঁরা কোনওভাবেই প্রণব মুখার্জিকে সমর্থন করবেন না। তাঁরা কয়েকটা নাম পাল্টা ভাসিয়ে দিলেন। ১) মনমোহন সিং ২) এপিজে আব্দুল কালাম। ৩) গোপালকৃষ্ণ গান্ধী। মনমোহন সিং তখন প্রধানমন্ত্রী। ফলে, রাজি হওয়ার কোনও প্রশ্নই ছিল না। বাকি দুজনও সাড়া দিলেন না। অগত্যা, ব্যাপারটা মোটেই দানা বাঁধল না।
এরই মধ্যে মুলায়ম সিং যাদব দুদিন পর জানিয়ে দিলেন, তিনি আগের ঘোষণা ফিরিয়ে নিচ্ছেন। অর্থাৎ, রাষ্ট্রপতি পদে প্রণব মুখার্জিকেই সমর্থন করবেন। যতদূর মনে পড়ে, সেই সময় মমতার শিবির থেকে মুলায়মকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলেও চিহ্নিত করা হয়েছিল। মুলায়মের এই হঠাৎ করে নেওয়া সিদ্ধান্তে বেশ ক্ষুব্ধই হয়েছিলেন মমতা। তিনি কার্যত একা পড়ে গেলেন। দিন কয়েক যেতে না যেতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীও হাজির প্রণববাবুর বাড়িতে, তাঁকে সমর্থনের বার্তা দিতে।
বলাই বাহুল্য, প্রণববাবুর রাষ্ট্রপতি হওয়ার পথে আর তেমন কোনও বাধা রইল না। কিন্তু দুই ‘ম’এর জোট যেভাবে ভেঙে গিয়েছিল, দশ বছর বাদেও তা বেশ চর্চার বিষয়।