সরল বিশ্বাস
পুজো পেরোতেই আবার চর্চায় ফিরে এসেছেন মানিক ভট্টাচার্য। বাংলার কী দুর্দিন। মানিক বললে এখন আর সত্যজিৎ রায়কে বোঝায় না। মানিক বলতে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও বোঝায় না। মানিক মানে, মানিক ভট্টাচার্য।
তিনি অন্যায়ভাবে টাকা নিয়েছেন কিনা, তিনি স্বজনপোষণ করেছেন কিনা, তা নিয়ে নানা চর্চা চলছে। তিনি গ্রেপ্তার হবেন কিনা, এতদিন ধরে সেই চর্চাও চলেছে।
কিন্তু তাঁকে ভিলেন করতে গিয়ে আসলে কাদের আড়াল করা হচ্ছে, সেটা আমরা ভেবেও দেখছি না।
আচ্ছা, গত এগারো বছরে স্বাস্থ্য বা শিক্ষা বা পুলিশ দপ্তরের বাজেট নিয়ে বিধানসভায় কবার আলোচনা করা হয়েছে? একের পর এক বাজেট গিলোটিনে পাঠানো হয়েছে। অর্থাৎ, কোনওরকম আলোচনা বা ভোটাভুটি ছাড়া পাস করানো হয়েছে।
অথচ, এই মানিক ভট্টাচার্যের জন্য তিনবার আইন সংশোধন করতে হয়েছে।
কীভাবে? সরকার যাকে খুশি প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান করতে পারে। এর জন্য বিধানসভার অনুমোদন নেওয়ার দরকার পড়ে না। এতদিন, এই পদে সর্বোচ্চ ষাট বছর পর্যন্ত মানুষেরা থাকতে পারতেন। কিন্তু মানিকবাবুর বয়স ষাট পেরিয়ে গেল। তখন শুধুমাত্র তাঁকে সেই পদে বহাল রাখার জন্য মেয়াদ আরও দু’বছর বাড়ানো হল। অর্থাৎ, ষাট থেকে হল বাষট্টি। একসময় সেই বাষট্টিও পেরিয়ে যাচ্ছে। তখন আবার অধিবেশনে আইন সংশোধন। বাষট্টি থেকে করা হল পঁয়ষট্টি। একসময় সেই পঁয়ষট্টিও পেরিয়ে গেল। তখন আরও তিন বছর মেয়াদ বাড়িয়ে তা হল আটষট্টি।
ভাবা যায়, একজন বিশেষ ব্যক্তিকে ওই পদে রাখতে হবে বলে তিন তিনবার বিধানসভায় অধিবেশন ডেকে আইন সংশো হল! বিধানসভায় প্রশ্নোত্তর পর্ব মুলতুবি হয়ে যায়। বাজেট নিয়ে কার্যত আলোচনা হয় না। অথচ, এরকম এক ‘কীর্তিমান’কে রাখতে তিন–তিনবার আইন সংশোধন করতে হয়। বাংলার বিধানসভা এতখানি লজ্জিত আর কখনও হয়েছে?
এই মানুষটির মধ্যে কী এমন ছিল যাঁকে ধরে রাখার জন্য তিন বার আইন সংশোধন করতে হল! কী গুণ ছিল, এতদিনে তো বোঝাই যাচ্ছে। যাঁদের চোখ কান খোলা, তাঁরা আগেও বুঝেছিলেন। তিনবার তাঁর মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন ছাড়া সম্ভব? স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রীর এই ক্ষমতা ছিল?
তাঁর কত সম্পত্তি, কী কী অনিয়ম করেছেন, সেটা মোটেই মূল বিষয় নয়। সবথেকে বেশি করে ভাবাচ্ছে এমন একজনের জন্য সরকার ও বিধানসভার এই তৎপরতা। তাই তিনবার আইন সংশোধনের কথাই বারবার বলতে হচ্ছে। যাঁর জন্য এমন নজিরবিহীন উদ্যোগ নেওয়া হল, তাঁর অপকর্মের দায় সরকার নেবে না তো কে নেবে? যে স্পিকার বাজেট আলোচনার জন্য সময় দিতে পারেন না, তিনি এমন একজনের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য তিন বার আইন সংশোধন করালেন! স্পিকারের চেয়ারও কি কলঙ্কিত হল না? বিধানসভাও কি কলঙ্কিত হল না?