মতি বসু
এশিয়া কাপ পর্ব শেষ। স্বাভাবিকভাবেই ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখ এবার বিশ্বকাপে। এই টি২০ বিশ্বকাপে কী দল হবে, কারা বাদ পড়বেন, কারা আসতে পারেন, এই নিয়ে কয়েকদিন ধরেই চর্চা চলছে।
কিন্তু দল নির্বাচনটা কবে? প্রায় সব কাগজেই লেখা হল, ১৬ সেপ্টেম্বর দল নির্বাচন। সেটা ধরে নিয়েই চলল নানা স্পেকুলেশন।
হঠাৎ জানা গেল, দল ঘোষণা হয়ে গেছে। যেদিন ঘোষণা হওয়ার কথা, তার অন্তত চারদিন আগেই। নির্বাচকরা বিশ্বকাপের দল জানিয়ে দিলেন। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দল কী হবে, তাও জানিয়ে দিলেন।
দলে বিরাট কোনও চমক নেই। থাকার কথাও ছিল না। কিন্তু একটা বিশ্বকাপের দল হয়ে গেল। মিডিয়া টেরও পেল না! এমনকী আগেরদিনও কেউ জানতে পারলেন না!
ভাবতে অবাক লাগে, ক্রিকেট সাংবাদিকতা কোন জায়গায় পৌঁছে গেছে। আটের দশক বা নয়ের দশকে এমনটা সম্ভব ছিল? কী দল হবে, কে কতটা নিখুঁত লিখতে পারবেন, কার কটা খবর মিলল, তা নিয়ে প্রতিযোগিতা চলত। কিন্তু দল নির্বাচন হবে, কেউ জানতেনই না, এমনটা কখনও হয়েছে বলে মনে হয় না। গৌতম ভটাচার্য বা দেবাশিস দত্তর সঙ্গে যে এই প্রজন্মের আলোকবর্ষ দূরত্ব, তা বারবার বোঝা যায়। এটুকু বলা যায়, তাঁরা সক্রিয় থাকলে বাংলার মিডিয়াকূলকে এমন লজ্জার মুখ দেখতে হত না।
একটা দল নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে কত মানুষ জড়িয়ে থাকেন। প্রথমত, পাঁচ নির্বাচক থাকেন। অধিনায়ক ও কোচেরও মতামত নেওয়া হয়। বোর্ডের শীর্ষস্থানীয় কর্তাদেরও জানার কথা। তাঁদের নিশ্চয় হঠাৎ করে ঘুম থেকে তুলে ডেকে আনা হয়নি। অর্থাৎ, তাঁরা অন্তত দু–তিন দিন আগেই জানতেন।
তারপরেও কোনও সাংবাদিক টের পেলেন না! খেলোয়াড়দের সঙ্গে সাংবাদিকদের সম্পর্কটা কোন স্তরে নেমে এসেছে, এই ছোট্ট ঘটনায় বোঝা যায়। যাঁরা কথায় কথায়, ‘বোর্ডের একটি সূত্র জানাচ্ছে’ বলে বারফাট্টাই করেন, তাঁদের যে কোনও ‘সূত্র’ই নেই, এই ঘটনা আরও একবার দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।
আসলে, এই প্রজন্মের অধিকাংশ সাংবাদিক নিজেদের অনুমানকে ‘সূত্রের খবর’ বলে চালাতে চান। কিন্তু ঠিকঠাক অনুমান করতে গেলে যে পরিমাণ চর্চা বা মেধা দরকার, সেটুকুও নেই। যে পরিণতিবোধ বা দূরদর্শিতা দরকার, তার অভাব বারবার প্রকট হয়ে আসে। তবু ‘সোর্স’ এর বারফাট্টাই কমে না।
এরপরেও কেউ কেউ বলেবন, আমি লিখেছিলাম, ওমুক দলে থাকবে। মিলে গেল। কেউ বলবেন, আমি আগেই বলেছিলাম, অমুক বাদ পড়বে। মিলে গেল। এটুকু তো চায়ের দোকানের পাঁচুও জানে। কিন্তু আস্ত একটা দল নির্বাচন হয়ে গেল, ঘোষণা হয়ে গেল, এটুকুও বঙ্গজ সাংবাদিকদের কেউ জানতেন না। এটা সমস্ত সাংবাদিককূলের লজ্জা।