রক্তিম মিত্র
তিনিই যেন মুশকিল আসান। তাঁর কাছে বলতে পারলেই সব সমস্যার সমাধান। গত কয়েকদিনে এরকম একটা ছবি তুলে ধরার চেষ্টা হচ্ছে।
একদিকে পার্থবাবুকে নিয়ে বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। এরই মাঝে খবর ছড়িয়ে গেল, এসএসসি–র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসতে চান অভিষেক ব্যানার্জি।
তিনি কি ধর্নামঞ্চে আসবেন নাকি তাঁর কাছে কয়েকজনকে নিয়ে যাওয়া হবে? এই নিয়ে প্রাইম টাইমে চলল নানা জল্পনা। পরে দেখা গেল, তাঁর কাছে কয়েকজনকে নিয়ে যাওয়া হল। তিনি আশ্বাস দিলেন। আন্দোলনকারীরাও নাকি দারুণ খুশি। এবার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
যাঁরা দিনের পর দিন খোলা আকাশের নিচে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের দায়ী করে লাভ নেই। তাঁরা সমাধান চাইবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কে ডাকছেন, তাঁর ডাকার নৈতিক অধিকার আছে কিনা, এসব ঠান্ডা ঘরে বসে ভাবা সহজ। কিন্তু ওই কঠিন আন্দোলনে যাঁদের দিনরাত কাটছে, তাঁদের সেই বাছবিচার করলে চলে না। তাই যুবরাজের অফিসে তাঁদের যাওয়ার মধ্যে কোনও অন্যায় দেখি না।
কিন্তু মূলস্রোত মিডিয়া যেভাবে যুবরাজের নামে ধন্য ধন্য রব তুলতে শুরু করল, তা দেখে সত্যিই অবাক হতে হচ্ছে। প্রথমত, এসএসসি–র নামে জেলায় জেলায় যেভাবে টাকা তোলা হয়েছে, যে সিন্ডিকেট কাজ করেছে, তার মূল মাথা কখনই পার্থ চট্টোপাধ্যায় হতে পারেন না। এখনও বিশ্বাস করি, তিনি নিতান্তই চুনোপুঁটি। এই বেআইনি টাকার আসল ঠিকানা অন্য কোথাও।
কোথায়? এটা নিয়ে খোদ তৃণমূল নেতৃত্বের মধ্যে কোনও সংশয় নেই। তাঁরা ভাল করেই জানেন, দলের মধ্যে সবথেকে দুর্নীতিগ্রস্থ লোকটির নাম কী?
বলতেই পারেন, প্রমাণ কোথায়?
এটা স্বীকার করতে কোনও দ্বিধা নেই, যে বোকামি পার্থ চ্যাটার্জি করেছেন, সেই আসল পান্ডা এমন বোকামি করার মানুষ নন। তাঁকে বুদ্ধি দেওয়ার জন্য অনেক পেশাদার লোক রয়েছেন। কীভাবে প্রমাণ না রেখে কাজ করতে হয়, সে ব্যাপারে তিনি সিদ্ধহস্ত। তাছাড়া, প্রমাণ খুঁজে বের করা যাঁদের দায়িত্ব, তাঁরা যদি প্রমাণ লোপাটের দায়িত্ব নিয়ে ফেলেন, তাহলে প্রমাণ থাকবে কীভাবে?
এই সহজ সত্যিগুলো এই রাজ্যে কোনও সচেতন মানুষেরই অজানা নয়। তৃণমূল নেতারা সবথেকে ভাল জানেন। সবাই সবকিছু জানেন। এরপরেও তাঁকে মহান করে তোলার চেষ্টা চলছে। এর থেকে ঘৃণ্য বিষয় আর কী হতে পারে?